নগরীর আকবরশাহ’য় ৬ বছরের শিশুকন্যা ধর্ষণের শিকার হয়নি। তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল। ধর্ষণ চেষ্টাকারী ঘটনার সময় গ্রেপ্তার নির্মল চন্দ্র আইচ নয়, ওই সময়ে বায়েজিদ এলাকায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত বেলাল হোসেন।
অধিকতর তদন্ত শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এ দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে এসব তথ্য। গত বছরের ২৩ নভেম্বর ডিবির পরিদর্শক প্রিটন সরকারের দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঘটনা পরবর্তী গ্রেপ্তার নির্মল চন্দ্র আইচের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করার মতো কোনোরূপ সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ডিএনএ রিপোর্টেও সুস্পষ্টভাবে ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। প্রকৃতপক্ষে ছয় বছরের ওই শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল বন্দুকযুদ্ধে নিহত বেলাল হোসেন। ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আগের তদন্ত কর্মকর্তা ও আকবরশাহ থানার এসআই বিকাশ চন্দ্র শীল আদালতে দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের ৪ মে ভিকটিম শিশুকে আকবরশাহ’র বেলতলী ঘোনার ফারুক চৌধুরী মাঠের পাশের অগ্রণী হাউজিং মাঠের পার্শ্ববর্তী স্থানে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়েছিল। কাজটি করে বেলাল হোসেন।
আদালত সূত্র জানায়, নির্মল চন্দ্র আইচকে আসামি করে মামলা হয়েছিল। ঘটনার পরপর তাকে আটক করে পুলিশের কাছেও দেয়া হয়। কিন্তু তখন পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত বেলাল হোসেনকে সামনে নিয়ে আসে পুলিশ। বলা হয়, বেলাল হোসেনই উক্ত শিশুকে র্ধষণ করে। তাদের যুক্তি ছিল, ভিকটিম শিশু বেলালকে ধর্ষক হিসেবে শনাক্ত করে। যদিও ২২ ধারায় নির্মল আইচের নাম বলে আদালতে জবানবন্দি দেয় শিশুটি।
আদালত সূত্র আরো জানায়, থানা পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে তখন নারাজি পিটিশন দাখিল করেন শিশুর পিতা। আদালত সেটি গ্রহণ করে ডিবিকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই সময় বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে শো’কজও করা হয়।
রিকশাচালক মামলার বাদীকে আইনী সহায়তাকারী আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান আজাদীকে বলেন, থানা পুলিশ বলেছিল ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। নির্মল চন্দ্র আইচ নয়, জড়িত হচ্ছে বেলাল হোসেন। এখন ডিবি বলছে, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। ধর্ষণ চেষ্টা হয়েছিল। অথচ আমরা জানি, নির্মল চন্দ্র আইচই ছয় বছরের উক্ত শিশুকে ধর্ষণ করে। ঘটনা পরবর্তী স্থানীয়দের হাতে আটক হওয়ার পর সে জড়িত বলে স্বীকারও করে। এই অবস্থায় আমাদের বক্তব্য হলো, প্রভাবিত হয়েই থানা পুলিশ এবং পরে তদন্তের দায়িত্বে আসা ডিবি পুলিশ আসামি নির্মল চন্দ্র আইচকে রেহাই দিতে চাইছে। সে অনুযায়ী অব্যাহতি চেয়ে আবেদনও করেছে। আমরা আদালতের কাছে প্রতিকার চেয়ে ফের নারাজি পিটিশন দেব এবং জুডিশিয়ারি তদন্তের আবেদন জানাব। তিনি বলেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর আমরা সময় চেয়ে আদালতের কাছে একটি আবেদন করেছি। আদালত সময় দিয়েছেন।
শিশুটির পিতা আজাদীকে বলেন, আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল নির্মল চন্দ্র আইচ। ঘটনার পর থেকে পুলিশ একেক সময় একেক কথা বলছে। সম্প্রতি আমাকে একটা কাগজ (মামলার তদন্তের ফলাফল অবহিতকরণ) দিয়েছে। অন্যদিকে আসামি জামিনে গিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা কী বিচার পাব না?