পুরো প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে করে দিতে চায় চীন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে একেবারে ফ্রিতে ফিজিবিলিটি স্টাডিসহ মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় চীন। প্রকল্পের প্রয়োজনীয় অর্থের পুরোটাই নিজেরা বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে চীনা কোম্পানি চায়না কনস্ট্রাকশন কোম্পানি বা সিসিসি। বিনিময়ে তারা সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূল থেকে মীরসরাই ইকোনমিক জোন পর্যন্ত এলাকায় সাগর ভরাট করে ভূমি উদ্ধার করে স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার প্রস্তাবও করেছে। চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি কোরিয়ান একটি কোম্পানি যখন প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রস্তাব দিয়েছে তখনই পুরো প্রকল্পটি ফ্রিতে করে দেয়ার চীনের প্রস্তাব নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। এতে করে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালুর ব্যাপারটিকে অনেকেই ‘সময়ের ব্যাপার মাত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে তৎপরতা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কোরিয়ান একটি কোম্পানির পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। যাতে প্রথমে সরকারি তহবিল থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালু আদৌ সম্ভব কিনা, প্রয়োজন আছে কিনা, কোন রুটে মেট্রোরেল যাবে, কোথায় থেকে কোথায় পর্যন্ত এই রুট থাকবে ইত্যাদি বিষয়ে সমীক্ষা পরিচালনার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ আলাপ আলোচনাও চলছে। কোরিয়ান কোম্পানির মেট্রোরেল প্রকল্পের সমীক্ষা পরিচালনার প্রস্তাবনার রেশ কাটার আগে চীনা কোম্পানি সিসিসি মেট্রোরেল প্রকল্পের সমীক্ষা একেবারে বিনে পয়সায় নিজেদের খরচে করে দেয়ার প্রস্তাব করেছে। শুধু সমীক্ষাই নয়, তারা ৮০ হাজার কোটি থেকে এক লাখ কোটি টাকার মেট্রোরেল প্রকল্প পুরোটাই নিজেদের অর্থায়নে করে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। মীরসরাই ইকোনমিক জোন থেকে বিমানবন্দর এবং শহরের গ্রোথ সেন্টারগুলোতে তারা মেট্রোরেলের রুট নির্ধারণ করবে এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা নিজস্ব অর্থায়নে করবে।
মেট্রোরেল প্রকল্পের বিনিময়ে তারা পতেঙ্গার বে টার্মিনালের পাশ থেকে মীরসরাই ইকোনমিক জোন (ফৌজদারহাট ভাটিয়ারীসহ শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড বাদ দিয়ে) পর্যন্ত এলাকায় সন্দ্বীপ চ্যানেলের কিছু অংশ ভরাট করে সিংগাপুর এবং দুবাইয়ের আদলে স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার প্রস্তাব করেছে। মেট্রোরেল ফ্রিতে করে দিলেও স্মার্ট সিটির দায়িত্বে চীনা কোম্পানি থাকবে এবং তারা প্লট বিক্রির অর্থ সরকারের সাথে প্রফিট শেয়ারিং করার প্রস্তাব দিয়েছে। চীনা কোম্পানি পতেঙ্গার বে টার্মিনালের পাশ থেকে মাঝের কিছু অংশ বাদ দিয়ে মীরসরাইয়ের ইকোনমিক জোন পর্যন্ত অন্তত ৫০ হাজার একর ভূমি রিক্লেম করার প্রস্তাব দিয়েছে। সাগর ভরাট করে ভূমি উদ্ধারে চীনা কোম্পানিটি পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়ে বলেছে, সাগরের এই অংশটি ‘ডেথএন্ড’ (শেষ সীমা)। তাই সাগরের এই অংশের উপকূলের কিছু অংশ ভরাট করলে তাতে সাগর কিংবা পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। সিংগাপুর, দুবাই কিংবা জাপানের মতো দেশেও সাগর ভরাট করে ভূমি তৈরি করা হয়েছে। যাতে বিমানবন্দর, বন্দরসহ স্মার্ট সিটি তৈরি করে লাখ লাখ মানুষের বসবাস এবং কোটি কোটি ডলারের ব্যবসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চীনা কোম্পানিটি সীতাকুণ্ডের উপকূলে এমন একটি উপশহর গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানের আয় তারা সরকারের সাথে শেয়ার করবে।
চীনা কোম্পানি সিসিসি চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর তলদেশে টানেলসহ দেশে বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বিশ্বের নানা দেশে এই কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে। চীনা এই কোম্পানি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিকট ফ্রিতে মেট্রোরেল করে দেয়াসহ পুরো প্রস্তাবটি প্রেরণ করেছে।
এ ব্যাপারে সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসের এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চীনা কোম্পানির প্রস্তাবটি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমাদেরকে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি সরকারকে জানাব। সরকারই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাতৃভাষার দাবিতে উত্তাল সারা দেশ
পরবর্তী নিবন্ধখাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সাথে সুজনের মতবিনিময়