রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস গবেষণায় অনন্য পথিকৃৎ। অতি প্রাচীন যুগের নিদর্শন সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৮৫ সালের ১২ই এপ্রিল ভারতে, মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স সহ এম.এ ডিগ্রি নেন তিনি। বেশ কিছুকাল কলকাতা জাদুঘরের পুরাতত্ত্ব বিভাগে কাজ করেছেন। পরবর্তীসময়ে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। মহেঞ্জোদারোতে খননকাজের মাধ্যমে সিন্ধু সভ্যতার প্রাচীন বহু নিদর্শন তাঁর তত্ত্বাবধানে আবিষকৃত হয়। আর এর ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক গবেষণার মাধ্যমে উদ্ধার করা গেছে প্রায় পাঁচ হাজার বছরেরও পুরোনো একটি সভ্যতার চালচিত্র।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাহাড়পুরের খননকাজেও অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছিলেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি গবেষণা করেছেন প্রাচীন মুদ্রা নিয়ে। আর গবেষণালব্ধ সকল বিষয় তিনি বিভিন্ন সময়ে গ্রন্থবদ্ধ করেছেন। এ সংক্রান্ত তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে: দুই খণ্ডে রচিত ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’, ‘পাষাণের কথা’, ‘পালস অব বেঙ্গল’, ‘দ্য অরিজিন অব বেঙ্গলি স্ক্রিপ্ট’, ‘হিস্ট্রি অব ওড়িষ্যা’ প্রভৃতি। লিখেছেন ‘করুণা’, ‘ধর্মপাল’, ‘শশাঙ্ক’, ‘লুৎফা’ ইত্যাদি উপন্যাস। ইতিহাস-আশ্রিত কাহিনি নিয়ে রচিত উপন্যাসগুলো তথ্যসমৃদ্ধ কিন্তু তথ্য ভারাক্রান্ত নয়। রাজাদের কাহিনি, রোমাঞ্চকর অভিযান, পর্তুগিজ জলদস্যুদের হামলা ইত্যাদির জীবন্ত বর্ণনা রয়েছে তাঁর বিভিন্ন উপন্যাসে। ‘ব্যতিক্রম’ ও ‘অনুক্রম’ নামে দু খানা সামাজিক কাহিনিও রচনা করেছেন তিনি। তাঁর সকল রচনাই সুখপাঠ্য। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কারের পাশাপাশি প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি লালনে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান অবিস্মরণীয়। ১৯৩০ সালের ২৩শে মে তিনি প্রয়াত হন।