আমাকে ডেকো, আমি আসবো, পাশে থাকবো

রাজীব দাশ | সোমবার , ১২ এপ্রিল, ২০২১ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

গত বছর, মে ২২ তারিখ, আমার এক স্টুডেন্টের মা করোনা পজিটিভ হলো, আমার স্টুডেন্ট তখন দুবাই। আসতে পারছে না। ওর মামা এগিয়ে এলো। বাসায় চিকিৎসা চলছে। কিন্তু বাধ সাধলো মামী। এক মাত্র ছেলে আমাকে ফোন করে কান্না করতে করতে বলল। আমার স্টুডেন্ট আমার প্রাণ। আমি গেলাম, ওর মামাকে বললাম, আপনি চিন্তা করবেন না। আমি প্রতিদিন ৪/৫ ঘণ্টা দেখাশোনা করবো। আর বাকি সময় আপনি থাকবেন, আর ডাক্তারের কথামত সব করবেন। ৩য় দিন গিয়ে দেখলাম, মামা উধাও। আমি টানা ৬ দিন সাথে থাকলাম। রাতে বাড়ি চলে আসতাম। ৯ম দিন অবস্থা খারাপ হয়ে গেলো। কোন রকমে এম্বুলেন্স জোগাড় করে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। কিন্তু আইসিইউ খালি ছিলো না। একটা জেনারেল বেডে শুইয়ে রেখেছিলাম। জিহান, আমার স্টুডেন্ট এর সাথে ফোনে কথা হচ্ছিল। ও বলল, স্যার যত টাকা লাগে পাঠাচ্ছি। কথা শেষ। বেডের কাছে এসে দেখি জিহানের মা আর নেই। অফিসিয়াল কাগজপত্র নিয়ে দাফনের টিম নিয়ে ওদের বাড়ি এনে দাফন কাজ শেষ করলাম। আত্মীয়রা দূরে থেকে দোয়া করছিল। কিন্তু জিহান আর দেখতে পেলো না তার মাকে। ওর মামা এসে হিসাব চাইলো কত খরচ হলো। জিহানকে ফোন করে বললাম। সে ওর মামাকে ফোন করে বলল,আমাকে যেন আর কোন কথা না বলে। নভেম্বর এ জিহান এলো। এসেই আমার সাথে দেখা করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলল, স্যার আপনি প্রথম থেকে থাকলে আমার মা আজ থাকতো। ও আমাকে টাকা দিতে চাইলো, আমি নিলাম না। বললাম আমার তো তেমন খরচ হয়নি। যাক এরপরে যেদিন আমার ছোট ছেলের অপারেশন হলো, সেদিন জানলাম, সেও আর নেই এই দুনিয়ায়। তাই আমি সেদিন স্থির করলাম, অন্তত বন্ধুদের আমি এই করোনাকালে সেবা দেব। কারণ আমার ভালোবাসার বন্ধুরা আমার জন্য অনেক করেছে। তাই বললাম, কারো করোনা হলে আমাকে ডেকো, আমি আসবো, পাশে থাকবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যেন অসহনীয়
পরবর্তী নিবন্ধপুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস গবেষণায় অনন্য পথিকৃৎ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়