নগর বিএনপির আওতাধীন সাংগঠনিক ইউনিটগুলো পুনর্গঠনে গত ২১ মার্চ পাঁচটি উপ-কমিটি করে দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কমিটি গঠনে তাদের ৯০ দিন সময়সীমা দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে ১৩৩ দিন পার হলেও একটি ইউনিট কমিটিও গঠন করতে পারেনি এ উপ-কমিটি। এ অবস্থায় নগরের আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করসহ বসে আওতাধীন ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন করবেন বলে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রতিশ্রুতি দেন উপ-কমিটির সদস্যরা। গতকাল তারেক রহমানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত র্ভাচুয়াল সভায় এ প্রতিশ্রুতি দেন তারা।
অবশ্য দায়িত্ব পাওয়ার পর তৃণমূলে সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালায় উপ-কমিটি। তবে এ কার্যক্রমে বিরত রাখা হয়েছিল শাহাদাত-বক্করকে। গতকাল ভার্চুয়াল সভায় বিষয়টি জানতে পারেন তারেক রহমান। এ বিষয়ে তিনি জানতে চান উপ-কমিটিকে তদারকে গঠিত কমিটির প্রধান ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানের কাছে। উত্তরে আহমেদ আজম খান বলেন, আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব সম্পৃক্ত হলে উপ-কমিটির সদস্যরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছিল। এমন উত্তরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারেক রহমান। পরে নির্দেশনা দেন আহ্বায়ক-সদস্য সচিবসহ বসে সম্মিলিতভাবে যেন সম্মেলনের মাধ্যমে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন করা হয়।
তবে পৃথক দুই উপ-কমিটির প্রধান এ বিষয়ে আপত্তি জানান। তারা বলেন, আমাদের কাছে গাইডলাইন ছিল উপ-কমিটি সংগঠন গুছাবে এবং আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব দলীয় কর্মসূচিগুলো পালন করবেন। তখন তারেক রাহমান বিরক্ত প্রকাশ করেন এবং কঠোর ভাষায় শাহাদাত-বক্করকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কমিটি পুর্নগঠন করতে পারবেন কিনা তা জানাতে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেন। এর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে ১১ আগস্ট উপ-কমিটির পাঁচ প্রধান এবং শাহাদাত-বক্করকে বহিষ্কার করার হুমকি দিয়ে মিটিং শেষ করেন।
বহিষ্কারের এ হুমকি পেয়ে উপ-কমিটির প্রধানগণ ও শাহাদাত-বক্কর নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করতে পুনরায় বৈঠকে বসেন। এতে তারা সম্মিলিতভাবে কাজ করার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছান। যা সাথে সাথে তারেক রহমানকে জানিয়ে দেন। পরে তিন মাসের মধ্যে তাদের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন তারেক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে একটি উপ-কমিটির প্রধান এস এম সাইফুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় কড়া বার্তা দিয়েছেন। সে আলোকে আমরা পুর্নগঠন প্রক্রিয়া শুরু করব। আরেক উপ-কমিটির প্রধান কাজী বেলাল বলেন, আগে গাইডলাইন ছিল উপ-কমিটি পুর্নগঠন করবে এবং আহ্বায়ক-সদস্য সচিব সহযোগিতা করবেন। এখন সম্মিলিতভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে বসে ঠিক করব।
ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারবেন কিনা তা জানাতে তারেক রহমানের ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেয়ার বিষয়টি দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেন আরেক উপ-কমিটির প্রধান এম এ আজিজ। তিনি বলেন, জানাতে না পারলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় ১১ আগস্ট সবাইকে কমিটি থেকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেন।
নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর দৈনিক আজাদীকে বলেন, ইউনিট কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কখন করতে হবে, কীভাবে করা হবে এসব নিয়ে কথা হয়েছে। চেয়ারম্যান মহোদয় চাচ্ছেন সম্মিলিতভাবে বসে ইউনিট, থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো যেন হয়ে যায়। ১০ আগস্ট পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেয়া সময় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, কবে থেকে শুরু করব তার ফাইনাল সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছেন। পরে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দ্রুত কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করব।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, সবাইকে মিলেমিশে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিন মাস সময় দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের নগর কমিটি করা হয়। তাদের তিন মাসের মধ্যে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করার নির্দেশনা ছিল। তবে চসিক নির্বাচন, করোনার জন্য সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকা ও ডা. শাহাদাত গ্রেপ্তার হওয়ায় কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করতে বিলম্ব হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ১৩ থানায় কর্মী সমাবেশ করে। কিন্তু কমিটি ঘোষণার আগ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা আসে আগে ওর্য়াড কমিটি গঠন করতে হবে। এ অবস্থায় অক্টোবর মাসে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা আসে, থানা কমিটির আগে ইউনিট ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে ইউনিট কমিটি গঠনের আগে সদস্য সংগ্রহেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে জন্য একটি তথ্য সংগ্রহ ফরমও পাঠায় কেন্দ্র। এর প্রেক্ষিতে অক্টোবর মাসে থানা কমিটি গঠন স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ ও মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করে কেন্দ্র। তখন আটকে যায় ইউনিট কমিটি গঠন। যদিও শেষ পর্যন্ত কমিটি গঠন করতে না পারার দায়ভার এসে পড়ে শাহাদাত-বক্করের কাঁধে। এরপর ২১ মার্চ পৃথক পাঁচটি উপ-কমিটি করে দেন তারেক রহমান। যেখানে নগরের বিদ্যমান কমিটির মধ্যে স্থান হয় মাত্র ১৭ জনের। এছাড়া গঠিত উপ-কমিটির তদারকির জন্য আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। উপ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নগরের থানাগুলোকে পাঁচটি জোনে ভাগ করা হয়। প্রতি জোনের জন্য একটি করে মোট পাঁচটি উপ-কমিটি গঠন করা হয় চার যুগ্ম আহ্বায়ক ও এক সদস্যের নেতৃত্বে। এর মধ্যে পাহাড়তলী, খুলশী ও হালিশহরের নেতৃত্বে আছেন এস এম সাইফুল আলম। এছাড়া কোতোয়ালী, চকবাজার ও বাকলিয়ায় এম এ আজিজ, ডবলমুরিং-সদরঘাটে কাজী বেলাল, চান্দগাঁও, বায়েজিদ ও পাঁচলাইশে নাজিমুর রহমান। বন্দর পতেঙ্গা ও ইপিজেডে নগর বিএনপির সদস্য এরশাদ উল্লাহর নেতৃত্বে উপ-কমিটি গঠন করা হয়।