‘হাজার কোটি টাকা পাচার করে’ পালিয়ে ভারতে ধরা পড়া পি কে হালদারকে ফেরত আনার তোড়জোড় শুরু হলেও এখনই তাকে পাওয়ার আশা করছেন না পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এদিকে তার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে ভারতকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো- এনসিবি কর্মকর্তারা জানান, গত রোববার ভারতের এনসিবিকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়। এছাড়া পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
বিডিনিউজের খবর থেকে জানা যায়, গতকাল সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভারতে বিচার শেষে বাংলাদেশের এই আসামিকে ফেরত পাওয়া যেতে পারে।
দুই বছর আগে পালিয়ে যাওয়া পি কে (প্রশান্ত কুমার) হালদার গত শনিবার পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ভুয়া নাম ব্যবহার করে ভারতের আধার কার্ডসহ নাগরিকত্বের নানা নথি তৈরির অভিযোগ আসে দেশটির সংবাদ মাধ্যমে। অবৈধ সম্পদের খোঁজে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) অভিযানে গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশি পি কে হালদার। ফলে আর্থিক দুর্নীতি নিয়েও বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন তিনি।
বাংলাদেশে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের ৩৪টি মামলা রয়েছে। ফলে তার আটক হওয়ার খবর জানার পর এই বিষয়ক তদন্ত শেষ করতে তাকে পাওয়ার আশা করছে সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
ভারতের সঙ্গে আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় পি কে হালদারকে পাওয়ার যে আশা করা হচ্ছে, সে বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সেট প্রসেডিওর আছে, এসব ক্ষেত্রে আমাদের একটি নীতি আছে। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করব। প্রথমে ভারত সরকার আমাদের জানাবে, এই লোক গ্রেপ্তার হয়েছে। হয়ত তাদের শাস্তি-টাস্তি দেবে। হয়ত আমাদের বলবে শাস্তির মেয়াদ বাংলাদেশে এসে কমপ্লিট করবে। এটা আমরা অন্যান্য দেশেরটাতে করি, তারাও আমাদের সাথে করবে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিবেচনায় তুলনামূলক আগেই পি কে হালদারকে ফেরত পাওয়ার প্রত্যাশা রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমার ধারণা, আমাদের সাথে ভারতের যে সোনালী অধ্যায়, তাতে অবশ্যই আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যা করতে চাই, তারা আমাদের কথা শুনবেন। সে অনুযায়ী কাজ হবে। হয়ত তার কিছু বিচার হবে। তারপরে হয়ত আমাদের দেবে।
ফেরাতে সব চেষ্টা চলছে : গতকাল দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদারের গ্রেপ্তারের বিষয়ে দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার গ্রেপ্তার হয়েছেন। ভারতে কিছু মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডও চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কমিশনে সকালে আমরা নিজেরা বসেছি এবং পরবর্তী কর্মকাণ্ড কী হবে, কমিশন থেকে এ বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তাকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান, ইন্টারপোল খুব দ্রুত রি-অ্যাক্ট করেছে, তারা দ্রুতই আমাদের অনুরোধে প্রেক্ষিতে ভারতীয় ইন্টারপোল বডির সাথে যোগাযোগ করে আসামিকে ফেরত আনার পদক্ষেপ নিয়েছে।
ভারতসহ দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গত শনিবার খবর আসে বিপুল অর্থ আত্মসাতের পর পালিয়ে থাকা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট- ইডি গ্রেপ্তার করেছে।
তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিলেন, সরকারিভাবে তাদের কাছে কোনো তথ্য নই। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছেন।