চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর তিন ইউনিয়নে প্রায় ৩২ হাজার গ্রাহকের ভোগান্তির কারণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর প্রিপেইড মিটার। গ্রাহকদের সুবিধার কথা বিবেচনায় বিদ্যুৎ খাতকে ডিজিটাল করতে ভিশন-২০২১-এর আওতায় স্মার্ট এই মিটার সংযোজনের করে সরকার। ভোগান্তি কমবে-এ আশায় অধিকাংশ গ্রাহক পুরনো মিটার বদলে আধুনিক সুবিধার এ ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার বসান।
কিন্তু ভোগান্তি কমার আশায় নেওয়া প্রিপেইড মিটারই যেন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের। সারাদেশের মতো কর্ণফুলীর ৩২ হাজারও গ্রাহকরাও বিরক্ত। কারণ আগের মিটারে ৫০০ টাকা বিল আসলে এখন মাসে আড়াই হাজার টাকা লাগে। মিটার ভাড়া, ভ্যাট ও ডিমান্ড চার্জের নামে বিভিন্ন খাতে টাকা কেটে নেওয়ায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। আগের মিটারের তুলনায় নতুন প্রিপেইড মিটারে দুই-তিনগুণ বিল বেশি আসে বলে অভিযোগ অহরহ।
চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ব্যবসায়ি মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘ডিজিটাল মিটার বলে এমনকি এ মিটারের সুযোগ সুবিধা বেশি বলে লাগিয়েছিলাম। এখন দেখছি সুবিধার থেকে অসুবিধাই বেশি। আগে যেখানে প্রতিমাসে ১ হাজার যেত এখন তিন হাজার টাকা লাগে। টাকা রিচার্জ করলেই ভাড়াসহ ভ্যাট ও ডিমান্ড চার্জে অর্ধেক টাকার অঙ্ক গায়েব।’
চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের চাকরিজীবী সেলিম খান বলেন, মিটারটি ১০ হাজার টাকায় কেনা। কিন্তু নিজের টাকা দিয়ে মিটার কিনেও টাকা ঢুকালেই প্রতি মাসে ৪০/৪৫ টাকা কাটে শুধু মিটার ভাড়া বাবদ। আমার মিটার, আমাকেই আবার ভাড়া দিতে হয়। এছাড়াও চার্জ তো আছে। আমরা এ রকম ডিজিটাল মিটার চাইনি। যে মিটার গরিবের পকেট কাটে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিটার ভাড়া কেন নিবে। পিডিবি তো এলাকার ঘরে ঘরে খুঁটি বসিয়েছে তাঁর ভাড়া কাকে দেয় পিডিবি।’ এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।
মইজ্জ্যারটেক পিডিবি উপকেন্দ্র অফিস সুত্রে জানা যায়, কর্ণফুলীকে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও সেচগ্রাহক রয়েছেন হাজার হাজার। এরমধ্যে বৈদ্যুতিক প্রিপেইড মিটারের গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ৩২ হাজার মতো। তাও কর্ণফুলীর শিকলবাহা, চরলক্ষ্যা ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে।
প্রিপেইড মিটারে প্রতিমাসের প্রথম রিচার্জে ডিমান্ড চার্জ বাবদ প্রতি কিলোওয়াটে ৪২ টাকা, মিটার ভাড়া ৪০ টাকা এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারের উপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কাটা হয়। এ জন্য চোখে বেশি পড়ে। আগে তা এতটা ছিলো না।
আরেকটি বিষয়, যেমন ধরেন ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট ১২ টাকা ৬৭ পয়সা আবার যখনই আপনি ৬০০ ইউনিটের উপরে যাবেন তখন প্রতি ইউনিট ১৪ টাকা ৬১ পয়সা হারে টাকা কাটবে।
যখন কোনো গ্রাহক বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৬০০ ইউনিটের স্লাপটাও পার করে যায় তখন ১৪ টাকা ৬১ পয়সা হারে প্রতি ইউনিটে টাকা কাটে। এজন্য গ্রাহকদের মনে হয় টাকা রিচার্জ করলেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ গ্রাহকের দাবি, এক মিটারে এত স্টেপ কেন? এত ভাবে ভাগ করে বিল কাটবে কেন। দরকার সমন্বয় করে বিদ্যুৎ বিল কমানোর।
এ প্রসঙ্গে পটিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী প্রকৌশলী আ. স. ম. রেজাউন নবী বলেন,’আসলে আমরাও বাসায় প্রি পেইড মিটার ব্যবহার করি। করার কিছু নেই। বেশি কাটার সুযোগ নেই। সরকার যদি ভাড়া, ভ্যাট ও ডিমান্ড চার্জ বাদ দেয় তাহলে অটোমেটিকলি তা কমে যাবে। আমরা তো এ বিষয়ে কিছু বলতে পারি না। মিটার ট্যারিফ বিলের বিষয় নির্ধারণ করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন (বিইআরসি)।’