পাহাড় নিধন ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা। মনিটরিংয়ে নিয়োজিত থাকবেন সরকারি বেসরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ জন্য জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় স্থাপন করা হবে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির অফিসও। চট্টগ্রামের পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৫ তম সভা শেষে বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন এ সিদ্ধান্তের কথা বলেন। গতকাল সকাল ১০ টায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্চের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ বন সংরক্ষক আবুল কালাম ও বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মাহাবুব উল আলম। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো সংস্থার কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলে যাতে নতুন করে কোনো পাহাড় কাটা না হয়, এ বিষয়ে নজরদারি অব্যাহত আছে এবং থাকবে। এতোদিন ধরে পাহাড়ে যারা অবৈধভাবে বসবাস করে আসছেন তাদের নিজ এলাকায় বা যেখান থেকে তারা আসছেন সেখানে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। এ জন্য তাদরেকে ১ মাসের সময় দেয়া হবে। গণবিজ্ঞপ্তি জারির পাশাপাশি মাইকিং করা এমনকি লিপলেটও বিতরণ করা হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পাহাড়ি অঞ্চলে আর কোনো ভূমিহীনকে পুনর্বাসনের কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করব না।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, জঙ্গল সলিমপুরসহ চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে যারা বসবাস করে বা করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে। রেলওয়েসহ বিভিন্ন সংস্থার যে সব পাহাড় রয়েছে তারা নিজ উদ্যোগে অবৈধ বসতির তালিকা প্রণয়ন করবে এবং আইনানুগভাবে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে। যে সব এলাকায় ইতিমধ্যে সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ যথাযথ থাকবে। নিরাপত্তা জোরদারে নিয়মিত প্রহরার ব্যবস্থা করা হবে। অবৈধ স্থাপনাগুলোতে নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে না। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা হয়েছে বলেও জানান বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সভায় জঙ্গল সলিমপুরে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও পুনর্বাসন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির অফিস স্থাপনসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্র আরো জানায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় জঙ্গল সলিমপুর প্রকল্পের খসড়া মাস্টার প্ল্যান উপস্থাপন করা হয় এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে মাস্টার প্ল্যানটি চূড়ান্ত করাসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেগুলো হলো, অবৈধ দখলদার থেকে শুরু করে সন্ত্রাস, ভূমিদস্যুতা ও মাদকের রাজত্ব কায়েমে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। এই এলাকায় কেউ থাকবে না, সবাইকে উচ্ছেদ করা হবে। যারা প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন রয়েছে তাদেরকে স্থায়ী ঠিকানায় স্ব স্ব উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে কয়েকটি টাস্কফোর্স কমিটিও গঠন করা হয়।
প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগেও সীতাকুণ্ড থানাধীন জঙ্গল সলিমপুর চট্টগ্রামের এক বিচ্ছিন্ন এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। যেখানে প্রবেশ করতে গেলে ভূমিখেকো ও সন্ত্রাসীদের দেয়া পরিচয়পত্র প্রয়োজন হতো। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ও পাহাড় রক্ষায় সম্প্রতি নজর দেয় জেলা প্রশাসন।












