পাহাড় চূড়ায় দশতলা ভবন

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ।। ডিজিটাল সাভে শেষ, চলছে নকশার কাজ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

নতুন একটি বহুতল ভবন হবে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতালের দশ নম্বর ওয়ার্ডের (বর্তমান আইসোলেশন ওয়ার্ড) পার্শ্ববর্তী খালি জায়গা নতুন ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দশ নম্বর ওয়ার্ডের ভবনটি পাহাড়ের চূড়ায়। এর পাশেই নতুন বহুতল ভবনটি নির্মাণে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম। জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের (২০২০ সালের) ১৯ মে অনুষ্ঠিত হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় একটি নতুন বহুতল ভবন নির্মাণের প্রস্তাব প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শিক্ষা উপমন্ত্রী ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন। ওই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে জায়গা নির্ধারণ করে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা গত ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগের (বিভাগ-১) নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর পাঠায় জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথের স্বাক্ষরে ওই প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। ন্যূনতম দশতলা বিশিষ্ট নতুন একটি ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ জানানো হয় প্রস্তাবনায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে বহুতল ভবন নির্মাণে ডিজিটাল সার্ভে সম্পন্ন করেছে গণপূর্ত বিভাগ। ডিজিটাল সার্ভের মাধ্যমে ভবন নির্মাণে স্থান নির্ধারণের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। পরবর্তীতে ন্যূনতম দশতলা বা এর অধিক তলা বিশিষ্ট একটি বহুতল ভবন নির্মাণে স্থাপত্য নক্সা (ডিজাইন) প্রণয়নে স্থাপত্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ। গত ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগের (বিভাগ-১) নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ-এর স্বাক্ষরে স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি বরাবর এ চিঠি দেয়া হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ গতকাল আজাদীকে বলেন, বর্তমানে নতুন ভবনের ডিজাইন প্রণয়নের কাজ চলছে। নক্সা প্রণয়ন শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন পেলে এ প্রকল্পের বাজেট নির্ধারণ করা হবে। অবশ্য, জেলা সদর জেনারেল হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে যেসব ভবন নির্মাণ হচ্ছে, সবগুলো ১২ তলা বিশিষ্ট জানিয়ে প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, এখানেও প্রস্তাবে ন্যূনতম দশ তলার কথা বলা হয়েছে। তবে সেটি ১২ তলাও হতে পারে।
নতুন বহুতল ভবন নির্মাণে প্রস্তাবনার বিষয়ে হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ১৯১৯ সালে এ হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে তেমন কোনো নতুন অবকাঠামো গড়ে উঠেনি। যেসব ভবন আছে, তার অধিকাংশই অনেক বছর আগের। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও রোগী বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার পরিসর বাড়ানো এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা সুবিন্যস্ত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যা নতুন অবকাঠামো ছাড়া কঠিন বলা যায়। যার কারণে হাসপাতালে নতুন একটি বহুতল ভবন নির্মাণ জরুরি। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায়ও এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী মহোদয়ও এ বিষয়ে বেশ আন্তরিক। তিনিও খুব করে চান এখানে নতুন একটি বহুতল ভবন হোক। প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ প্রকল্প অনুমোদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবনায় দেখা যায়, নতুন দশ তলা ভবনের ফ্লোর বিন্যাসও উল্লেখ করা হয়েছে। নিচ তলা জুড়ে থাকবে জরুরি বিভাগ। যেখানে ক্যাজুয়াল্টি শয্যা, এক্স-রে মেশিন রুম, রেডিওলজি কনসালটেন্ট বসার কক্ষ, রেডিওলজিস্ট কক্ষ, এটেনডেন্ট বসার জায়গা, টয়লেট, স্টোর ও পার্কিংসহ একটি আধুনিক জরুরি বিভাগের সার্বিক সুবিধা রাখার কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় ও ৩য় তলা জুড়ে থাকবে গাইনী ও অবস ওয়ার্ড। ৪র্থ তলায় থাকবে ওটি (অপারেশন থিয়েটার) কমপ্লেক্স ও আইসিইউ বিভাগ। ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা জুড়ে সার্জারি ওয়ার্ড। ৭ম তলায় থাকবে নাক-কান-গলা ওয়ার্ড এবং চক্ষু ওয়ার্ড। ৮ম তলায় অর্থোপেডিক্স সার্জারি, নবম তলায় কেবিন, নার্স স্টেশন ও স্টোর। দশ তলায় অডিটরিয়াম, লাইব্রেরি, ক্লাস রুমের পাশাপাশি কেন্টিনও রাখার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবনায়। অন্যান্য সুবিধাদি সংযুক্তির লক্ষ্যে ভবনের তলা সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে বলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনুরজাহানের কান্না থামাবে কে
পরবর্তী নিবন্ধগোসলে ১০ নির্দেশনা