একাত্তরে জল্লাদখানা হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বধ্যভূমিটি সংরক্ষণে আদালতের নির্দেশের পর সাত বছর পেরিয়ে গেলেও তা ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় আটকে আছে। জেলা প্রশাসন বলছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া অর্থ বরাদ্দ মিলতে আরও চার মাস সময় লাগতে পারে। তারপরই শুরু হবে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ। এদিকে আদালত নির্দেশিত এক দশমিক ৭৫ একর জমির পুরোটা অধিগ্রহণ করে গণহত্যা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবিতে আজ মঙ্গলবার সেখানে মানববন্ধন ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে পাহাড়তলী বধ্যভূমি রক্ষা পরিষদ। খবর বিডিনিউজের।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৪ সালের ১১ মার্চে দেওয়া এক আদেশে এক দশমিক ৭৫ একর জমির সম্পূর্ণ অংশ পাহাড়তলী বধ্যভূমি বলে রায় দেওয়া হয়। বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত জমির বেশিরভাগ বেসরকারি ইউনির্ভাসিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) দখলে রয়েছে। বধ্যভূমি রক্ষা পরিষদের অর্থ সম্পাদক মোস্তফা কামাল যাত্রা বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, জমিটি ডিসপিউটেড নয়। তাহলে আদালতের রায় অনুসারে, এটা তো খাস জমি। সেক্ষেত্রে সেটি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিপূরণ কেন দিতে হবে? জমি অধিগ্রহণের যে অর্থ বরাদ্দের কথা বলা হচ্ছে, তা এতদিনেও হচ্ছে না কেন। ৭ বছর আদেশ বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হওয়ায় লাভবান হচ্ছে ইউএসটিসি। বর্তমান স্মৃতিসৌধের পিছনে অস্থায়ী অবকাঠামো করে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
মোস্তফা কামাল যাত্রা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাহাড়তলী বধ্যভূমি কমপ্লেঙ প্রকল্প ও জাদুঘর করার জন্য আলাদা বরাদ্দ আছে বলে শুনেছি। এত বিলম্বের কারণে স্বাভাবিকভাবেই ধারণা হয়, এতে কেউ লাভবান হচ্ছে বলেই হয়ত প্রকল্প গতি পাচ্ছে না।
বধ্যভূমি রক্ষা পরিষদের সভাপতি ও রিটকারীদের অন্যতম বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. গাজী সালেহ উদ্দিন চলতি বছর অগাস্টে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এর আগে চলতি বছর বধ্যভূমিটির পুরো জমি অধিগ্রহণের দাবিতে এক কর্মসূচিতে গাজী সালেহ উদ্দিন ক্ষোভ জানিয়ে বলেছিলেন, চট্টগ্রামে মোট ১১১টি বধ্যভূমি থাকলেও একটি বধ্যভূমিও রক্ষা করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। এই পাহাড়তলী বধ্যভূমি শুধু টিকে আছে আমাদের মামলার কারণে। পরিষদের সহ-সভাপতি নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজি বলেন, আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। আদালতের আদেশ রয়েছে। এরপরও যদি সরকারের টনক না নড়ে, তাহলে কী করতে পারি? চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে জমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থের চাহিদাপত্র মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। এতে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা লাগতে পারে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, বরাদ্দ পাওয়া গেলেই জমি অধিগ্রহণ শুরু হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আগামী রিভাইসড বাজেটে মার্চ-এপ্রিল নাগাদ বরাদ্দ পাওয়া যেতে পারে। অন্য প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে শুধু খাস জমি নয়, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিও আছে। খাস জমি হলে আমরা অপেক্ষা করতাম না। এতদিনে উচ্ছেদ করে ফেলতাম।