পাহাড় কাটা বন্ধ হোক

হাবিবুল হক বিপ্লব | মঙ্গলবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিবেশ রক্ষায় পাহাড় ও প্রাকৃতিক বনভূমির প্রয়োজন অপরিসীম। একটি দেশের মোট জমির কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা দরকার। কিন্তু আমাদের দেশে রয়েছে ১৫ শতাংশেরও কম বনভূমি, তাও দিন দিন তা কমছে। নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে জীববৈচিত্র্য নানাভাবে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রাচীনকাল থেকেই চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অংশ পাহাড়পর্বত। কিন্তু বর্তমানে চট্টগ্রামের অধিকাংশ পাহাড়ি অঞ্চল কেটে চলছে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। ফলে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে আর পরিবেশ থেকে নানা ধরনের জীবজন্তু বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের দাবি, গত ৪ দশকে চট্টগ্রাম নগরীতে বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় ১২০টি পাহাড়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন২০১০ (সংশোধিত)-এ পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এটি আমলযোগ্য অপরাধ। তারপরও চলছে গোচরেঅগোচরে নির্বিচারে পাহাড় কাটা।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সাল থেকে পরবর্তী ৩৪ বছরে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের ৮৮টি পাহাড় সম্পূর্ণ এবং ৯৫টি আংশিক কেটে ফেলা হয়। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচ থানা এলাকায় পাহাড় ছিল ৩২.৩৭ বর্গকিলোমিটার, যা ২০০৮ সালে কমে দাঁড়ায় ১৪.০২ বর্গকিলোমিটারে। এ সম্পর্কে বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম বলছে, ‘পাহাড় রক্ষার দায়িত্ব যাদের, তারাও পাহাড় কাটছে।’ শুধু চট্টগ্রামে নয়, পার্শ্ববর্তী জেলা কঙবাজারেও চলছে পাহাড় ও বনভূমি দখলের কর্মকাণ্ড। অথচ বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫এ স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না। ঘরের যেমন খুঁটি বা পিলার থাকে, তেমনি জমিনেরও খুঁটি থাকে। পাহাড় হলো জমিনের খুঁটি বা পেরেক। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঘনঘন পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। পাহাড়ের গায়ে জন্মানো বনজঙ্গল ও গাছপালা পাহাড়ের অভ্যন্তরীণ বন্ধন মজবুত রাখে। পাহাড় কাটার কারণে সেই বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে পাহাড় ধসের পথ সুগম হয়। পরিণতিতে প্রাণ হারান শত শত মানুষ।

১৯৮৩ সালের এক সরকারি আদেশ অনুযায়ী, চট্টগ্রামের কোথাও কোনো পাহাড় কাটা যাবে না। ২০০৭ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, জাতীয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন ছাড়া পাহাড় কাটা যাবে না। উচ্চ আদালত ২০১২ সালের ১৯ মার্চ আদেশ জারি করেনচট্টগ্রাম, কঙবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে কোনো পাহাড় কাটা যাবে না। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে আইনের ব্যাপক ফারাকের কারণে বর্তমানে পাহাড় রক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশব্দ দূষণ নয় বরং প্রতিকার করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধকাজ