পাহাড়ে রং ছড়াল পিঠা ও সাংস্কৃতিক উৎসব

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শনিবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার প্রত্যন্ত জনপদ ওয়াচু গ্রাম। মাটিরাঙা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে গ্রামের একমাত্র বিদ্যাপীঠ বিন্দু বিদ্যানিকেতন। প্রতি বছরের ন্যায় বিদ্যালয়ে এবারও আয়োজন করা হয়েছে বর্ণিল পিঠা উৎসব। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয় উৎসবের আয়োজন।

বিদ্যালয়ের মারমা, ত্রিপুরা ও চাকমা শিক্ষার্থী এবং গ্রামের নারীরা তৈরি করেছে বাঁশ পিঠা, ছেছমা পিঠা, সাইন্যা পিঠা, কলাপাতা পিঠাসহ অন্তত ১০ রকমের পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী পিঠা। পিঠা উৎসবে আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করে নৃত্য ও গান। অংশ নেয় ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলায়। পিঠা উৎসবে অংশ নিয়ে খুশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ক্রাইঞো মারমাসহ আরো কয়েকজন জানান, আমাদের এখানে প্রতিবছরই পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন ধরনের পিঠা সকাল থেকে বানানো হয়েছে। আমরা নাচ করেছি, গান করেছি এবং খেলাধুলায় অংশ নিয়েছি। খুব আনন্দ হয়েছে। আমরা সারা বছরই এই উৎসবের জন্য অপেক্ষা করি।

উৎসবে অংশ নেয়া শিক্ষক তপু ত্রিপুরা বলেন, এখানে ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন যা আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে।

বিন্দু বিদ্যানিকেতন পরিচালনা কমিটির সদস্য ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জাহেদ আহমেদ টুটুল ২০২০ সালে পিঠা উৎসবের সূচনা করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার আয়োজন করা হয়েছে। পিঠা উৎসবের মাধ্যমে আমরা যে মিলনমেলা করি তার মাধ্যমে এখানকার মানুষের সাথে আমাদের একটা মেলবন্ধন তৈরি হয়।

উৎসবে অংশ নিয়ে লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, এখন যে একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশ গড়ার চেষ্টা সবাই মিলে করছে তা আমি এই বিন্দু বিদ্যানিকেতনে তার একটা বাস্তবায়ন দেখলাম। পাহাড়ি সমাজে শিক্ষা বিস্তারের কাজে যুক্ত হয়েছে একদল বাঙালি। পুরো অনুষ্ঠানের অফিসিয়ালি ল্যাংগুয়েজ বলতে পারি মারমা, চাকমা, ত্রিপুরার পাশাপাশি বাংলা ভাষা। এখানে বলা হচ্ছে পিঠা উৎসব কিন্ত এখানে যে সাংস্কৃতিক উৎসব হচ্ছে সেখানে ৪টি ভাষার স্ফূরণ হয়েছে। এখানে ইনক্লুসিভ শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে।

বিন্দু বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক রাজীব চক্রবর্তী বলেন, মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা জনগোষ্ঠীর ৭৫ শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি এখানে তাদের মাতৃভাষাও সপ্তাহে একদিন পাঠদান করা হয়। এখানে যে উৎসব হচ্ছে তার সবকিছুই এখানকার শিক্ষার্থীরা প্রস্তুত করেছে। আগামীতেও এমন উৎসবের আয়োজন করা হবে।

পিঠা উৎসবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আতিকুর রহমান, শেফালিকা ত্রিপুরা, প্রশান্ত ত্রিপুরা, প্রতিভা ত্রিপুরা, ধ্রুবজ্যোতি হোড়, সাইফুজ্জামান সাকন, জান্নাতুল পপি প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফুলের রাজ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান কর্নার
পরবর্তী নিবন্ধনির্মাণের আড়াই বছর পরও অব্যবহৃত চারতলা ভবন