রঙে রঙে/ পাগল ঝোরা লুকিয়ে ঝরে/ গোলাপ জবা পারুল পলাশ/ পরিজাতের বুকের পরে।‘
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুব সুন্দর করে এ ক‘টি পংক্তি লেখেছেন পারিজাত কেশর ফুল নিয়ে। পারিজাত ফুলে কোনো গন্ধ নেই। কেশর দুলিয়ে লাল পাপড়ির পাশে ফোটে। সারা শরীর লাল টকটকে, মঞ্জরিতে থাকে অনেক ফুল। এটি ফুল গাছ হলেও এ গাছের ছাল ও পাতার অনেক ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। যত্নের অভাবে দিনে দিনে এই গাছ আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
এটির ইংরেজি নাম Brownea coccinea এবং এটি Caesalpiniaceae জাতের অন্তর্গত। বাংলাদেশে এটির নাম পাখি ফুল বলে উল্লেখ করেছেন কবিরা। এ গাছটির সুদৃশ্য পাতা রয়েছে। এ ফুল দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। কিন্তু সবুজ পাতার ভেতর টকটকে লাল ফুল সবসময় বাইরে থেকে দেখা যায় না। ডালগুলো মাটির দিকে ঝুলে থাকে। এই কারণে ফুলটি খুঁজে পাওয়ার জন্য গাছের কাছে যেতে হয়।
এটি একটি বিদেশি ফুল। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের কিছু জায়গায় এটি দেখা যায়। বলা হয়ে থাকে, এটি ল্যাটিন আমেরিকা এবং পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের স্থানীয় ফুল। বিভিন্ন অঞ্চলে এর বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন, স্কারলেট ফ্লেম বিন, ভেনিজুয়েলান রোজ, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান মাউন্টেন রোজ, কুপার হুপ ইত্যাদি। বাংলাদেশে এটিকে পাখি ফুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বেশ কিছু লেখক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল আজাদীকে বলেন, কমলাপুরের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির এবং বোয়লখালীসহ আরও কিছু জায়গায় এ ফুল গাছটি রয়েছে। অনেকে এটাকে পারিজাত বলে বটে, কিন্তু এর প্রকৃত নাম হলো পাখি ফুল। কম্বোডিয়া, ইকুয়েডর ও ভেনিজুয়েলার স্থানীয় প্রজাতি এটি।
তিনি আরও বলেন, এ ফুলের কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। ঠান্ডা–সর্দিজনিত রোগ, ক্ষত শুকাতে এবং রক্ত পড়া বন্ধ করতে এটি কাজে লাগে। এছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও এটি ব্যবহৃত হয়।