পারস্পরিক সহমর্মিতায় ও সমঝোতায় দেশের রাজনীতি হোক জনমুখী

| শুক্রবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে সহিংসতার চিত্র নতুন নয়। রাজনৈতিক কর্মসূচি, দলীয় সংঘাত, উপদলীয় কোন্দলএসব ঘিরে লেগে থাকে এই সহিংসতা। অন্তর্কোন্দল ছাড়াও পুলিশের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটতে থাকে প্রায় সময়।

অতীতে বিভিন্ন সময়ে দেখেছি আমরা রক্তপাত ও প্রাণহানির ঘটনা। দেশের সরকারি দলের সঙ্গে প্রধান বিরোধী দলের বিরোধ যেন চিরকালীন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে রক্তপাত ও সংঘাত দেখা যাচ্ছে, তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এই সহিংসতা লেগে আছে। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা তত যেন বাড়ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ‘দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল এখন একেবারেই মুখোমুখি অবস্থানে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ক্ষমতাপ্রত্যাশী বিএনপিকে মাঠের রাজনীতির দখল নিতে দেবে না। আবার ১৬ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থেকে মাঠের রাজনীতিতেও দুর্বল হয়ে পড়া বিএনপিও মাঠে নিজেদের শক্তি দেখাতে মরিয়া। দুই দলের কেউ কাউকে ছাড় না দেওয়ার যে মহড়া শুরু হয়েছে, তাতে দেশে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। কোনো খোলা ময়দানে ঘোষণা দিয়ে দুই দলের কর্মীসমর্থকদের মধ্যে হামলাসংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে সাধারণ মানুষের উদ্বেগআতঙ্কের কিছু থাকত না। কিন্তু সে রকম তো ঘটবে না। সংঘর্ষ হবে রাস্তাঘাটে বা যেখানে সমাবেশ থাকবে। ফলে কার নিক্ষেপ করা ঢিল কার মাথা ফাটাবে কিংবা কার কোমরে গুঁজে রাখা অস্ত্র তাক করে ছোড়া গুলি কার বুক ঝাঁজরা করবে, তা আগে থেকে বলা মুশকিল। বাঘেমোষের লড়াইয়ে উলুখাগড়ার প্রাণ যাবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে রাজনীতি অনেক সময় উন্নয়নের প্রতিপক্ষ হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সন্ত্রাসনাশকতায় হুমকির মুখে পড়েছে অনেক অর্জন। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এ ধরনের ঘটনা কোনো অর্থে শুভ সংবাদ বয়ে আনে না। অনেকেই অভিযোগ করেন, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অসুস্থ ধারার অনুপ্রবেশ ঘটে গেছে। একের দোষ অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে আজও বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশের রাজনীতি। আর সে কারণেই দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কোনো উন্নতিও দেখা যায় না। কাদা ছোড়াছুড়ি ও দায় চাপানোর পুরনো অভ্যাস থেকে কোনোভাবেই বেরিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না। এতে রাজনৈতিক পরিবেশই শুধু নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাজনৈতিক সমপ্রীতিও। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও আস্থা না থাকলে একসময় প্রকৃত রাজনৈতিক পরিবেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও সংগঠনের নিজস্ব মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানেও এই মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত। অভিজ্ঞমহলের বক্তব্য হলো, ‘আমরা দেখতে চাইব, অবিলম্বে এ সহিংসতার প্রবণতা বন্ধ হয়েছে। ভুলে যাওয়া চলবে নাসভাসমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে কোনো রাজনৈতিক দল নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি ঘোষণা ও পালন করতে পারে। তারপরও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর চাপ প্রয়োগ সমীচীন হতে পারে না। সামপ্রতিক এসব ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের একটি অংশের মধ্যেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কৌশল ও বুদ্ধিমত্তার বদলে মারমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই প্রবণতা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর হতে বাধ্য। রাজনৈতিক কর্মসূচি যদি সহিংসও হয়ে ওঠে; জনসমাগম ছত্রভঙ্গ করার নানা অপ্রাণঘাতী ব্যবস্থা তো রয়েছে। তার বদলে সহিংসতা কেন। অহেতুক রক্তপাতের জন্য যারাই দায়ী হোক না কেন; তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সুস্থ গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হলো সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি। সব রাজনৈতিক দল যদি নিজের কাজের প্রতি যত্নশীল হয়, তাহলে সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্মাণ করা তো অসম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, গণতন্ত্রে পরমতসহিষ্ণু হতে হয়। গুরুত্ব দিতে হয় জনগণকে। আমরা চাইবো, সহিংসতা থেকে রাজনীতিকে মুক্ত করতে হবে। শ্রদ্ধা রাখতে হবে অন্যের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি। পারস্পরিক সহমর্মিতায় ও সমঝোতায় বাংলাদেশের রাজনীতি হবে গঠনমূলক ও জনমুখী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে