পাবলো রুইজ ই পিকাসো (১৮৮১ –১৮৮১)। যিনি পাবলো পিকাসো হিসেবে পরিচিত, ছিলেন একজন স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, প্রিন্টমেকার, মৃৎশিল্পী, মঞ্চ নকশাকারী, কবি এবং নাট্যকার। শিল্পকলার জগতে পাবলো পিকাসো অবিস্মরণীয় নাম। শৈশব থেকেই তাঁর মধ্যে ছবি আঁকার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। পেনসিল কিংবা কাঠকয়লা পেলে মেঝেতেই আঁকিবুকি করতেন। ছাত্রাবস্থায় তাঁর মধ্যে শিল্প চেতনার বিকাশ ঘটে। তাঁর অসাধারণ প্রতিভার স্পর্শে সমৃদ্ধ হয়েছে চারুকলার বিভিন্ন অঙ্গন। পিকাসো একটি স্পেনীয় নাম। তার প্রথম পারিবারিক নাম হল রুইজ এবং দ্বিতীয় নাম পিকাসো। বাবার নাম হোসে রুইজ ব্লাসকো। মায়ের নাম মারিয়া পিকাসো লোপেজ। মায়ের নামের অংশ থেকেই তার বিশ্বপরিচিত নামটি এসেছে। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। দক্ষিণ স্পেনের ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী বন্দর–শহর মালাগায়। বাবা ছিলেন প্রাদেশিক চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের চিত্রাঙ্কনের শিক্ষক এবং স্থানীয় জাদুঘরের কিউরেটর। বিখ্যাত আন্দালুসিয়ার মধ্যে মালাগা ছিল চারুকলার জন্য বিখ্যাত কেন্দ্র। তাই ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি ঝোঁক ছিল পিকাসোর। আঁকাআঁকিতে বাবার কাছেই পিকাসোর হাতেখড়ি শৈশবে। ১৯ বছর বয়সে একটি ছবি এঁকে পিকাসো শিল্পবোদ্ধাদের নজর কাড়েন। ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চলে যান শিল্প সাধনার চারণভূমি, ছবির দেশ কবিতার দেশ ফ্রান্সে। এরপর প্যারিসই হয়ে ওঠে তাঁর শিল্পচর্চার প্রধান ক্ষেত্র। প্যারিসে শিল্পী জীবনের শুরুর দিকে তাঁকে নিয়তই দারিদ্র্য আর ক্ষুধার সাথে সংগ্রাম করতে হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই তিনি নিরন্তর সাধনা করে গেছেন, ধীরে ধীরে পেয়েছেন খ্যাতি, যশ, অর্থ–বিত্ত। পিকাসো বিশ্ববিখ্যাত ছবি ‘গুয়ের্নিকা’ এঁকেছিলেন স্পেনের গৃহযুদ্ধের স্মরণে। তাঁর আঁকা অন্যান্য বিখ্যাত শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য ব্লু রুম’, ‘সেল্ফ পোট্রেট’, ‘থ্রি মিউজিশিয়ান্স’, ‘পালামো’, ‘মডেল অ্যান্ড ফিশবৌল’, ‘গিটার’, ‘থ্রি ডান্সার্স’ প্রভৃতি। তিনি শুধু ছবিই আঁকেন নি, ভাস্কর্য ও ছাপচিত্রও তাঁর অনুপম সৃষ্টিশীল স্পর্শে সমৃদ্ধ হয়েছে। বলা হয়ে থাকে পিকাসোর শিল্পী জীবনে ছিল নানা কালপর্ব। যেমন: ব্লু, রোজ, কিউবিস্ট প্রভৃতি। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই এপ্রিল ফ্রান্সের মুগা শহরে বিশ্ববিখ্যাত এই চিত্রকর মৃত্যুবরণ করেন।