পান থেকে চুন খসলেই অবরোধ

ফের অচল চবি, বিপাকে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের ৩ দাবি

চবি প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বর্ধিত করার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দিয়েছে শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে দিনভর বিক্ষোভ করে তারা। এসময় শাটল ট্রেন আটকে দেয়া হয়। ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যায়নি শিক্ষক বাসও। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে না পারায় বিভিন্ন বিভাগে নির্ধারিত ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অনেককে অর্ধেক পথ থেকে বাসায় ফিরে যেতে হয়েছে। এ নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন ‘পান থেকে চুন খসলেই অবরোধ’। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বানও জানিয়েছেন কেউ কেউ। আন্দোলনে যোগ দেয় সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগের ছয়টি উপগ্রুপের নেতাকর্মী। গ্রুপগুলো হলো ভিএক্স, কনকর্ড, আরএস, বাংলার মুখ, একাকার, এপিটাফ ও উল্কা। দুপুরের পরে বিজয়ের একাংশ আন্দোলনে যোগ দেয়। বিজয় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। দুপুরের পরে মূল ফটক খুলে দিলেও আন্দোলন চলমান থাকবে জানিয়েছে নেতাকর্মীরা। দাবি না মানলে লাগাতার চলবে বলেও জানিয়েছে তারা।
জানা যায়, গত ৩১ জুলাই রাত ১টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছে ক্যাম্পাসে। আন্দোলনকারীদের দাবি, শতাধিক বিতর্কিত স্থান পেয়েছে কমিটিতে। রয়েছে অছাত্র, বিবাহিত, বহিষ্কৃত, বিভিন্ন মামলার আসামি ও জামায়াত-বিএনপি রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ৩১ জুলাই মধ্যরাতে কমিটি ঘোষণার পর পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকিয়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেয় উপগ্রুপ বিজয়। তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলনে যোগ দেয় সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের নেতৃত্বাধীন সিএফসি উপগ্রুপ। তারা উভয়ই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের অনুসারী। কয়েক ঘণ্টা পরে সিএফসি সরে আসলেও বিজয় আন্দোলন চালিয়ে যায়। দুইদিন ক্যাম্পাস অচল রেখে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার পর শিক্ষা উপমন্ত্রীর হুঁশিয়ারে আন্দোলন স্থগিত করে তারা। এরপর আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী সাতটি উপগ্রুপ ১০ আগস্ট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন করেন নবগঠিত কমিটির ৯৪ জন নেতাকর্মী। এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে তিন দফা দাবি ও দাবি না মানলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারির কথাও জানান তারা। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর বর্ধিত কমিটির দাবিতে শহীদ মিনার চত্ত্বরে মানববন্ধন করে তারা। একদিন পর একই স্থানে বর্ধিত কমিটির দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করে তারা। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ মিছিল করে সাতটি উপগ্রুপ। পরে মূল ফটক আটকিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ তারা। প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হয় ফটক।
বার বার অবরোধ, নির্বিকার প্রশাসন : এদিকে শাখা ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ যেকোনো ঘটনায় বার বার আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে সংগঠনটির বিভিন্ন পক্ষের নেতাকর্মীরা। এতে একদিকে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন চবি সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর সিরাজ উদ দৌল্লাহ।
তিন দাবি না মানলে লাগাতার আন্দোলন : দাবিগুলো হলো, পদবঞ্চিতদের মূল্যায়ন করে ত্যাগী ও পরিশ্রমী কর্মীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্তকরণ। কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের যোগ্যতা অনুসারে পদগুলোর পুনঃমূল্যায়ন এবং কমিটিতে পদপ্রাপ্ত বিবাহিত, চাকরিজীবী ও দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাগ্রহণ। ভিএঙ উপগ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় আজাদীকে বলেন, দাবি না মানলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। তিনটি দাবি দিয়ে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। বিজয় উপগ্রুপের নয়ন মোদক বলেন, আমরা আগেও কমিটির জন্য আন্দোলন করেছি। বিভিন্ন আশ্বাসে সেটা স্থগতি করা হয়েছে। এখন শুনছি বর্ধিত কমিটি না করে হল-অনুষদ কমিটি করা হবে। আমরা সেজন্য আন্দোলনে গিয়েছি।
এদিকে আন্দোলনের কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন চবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু। তিনি বলেন, কমিটি বর্ধিত করা একটি আলোচনার বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে জিম্মি করে আন্দোলন করার বিষয় না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি করে এ ধরনের আন্দোলন গ্রহণযোগ্য নয়। আর কেউ চাইলে তো কমিটি বর্ধিত করতে পারবে না। আমি নিজে থেকে তাদের দাবি দাওয়া কেন্দ্রে জানিয়েছি। নাছির ভাইকে জানিয়েছি। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী আছে কয়েক হাজার। যতোই চেষ্টা করি সবাইকে তো কমিটিতে সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যোগ্যতার ভিত্তিতে কমিটি দিতে। হ্যাঁ কিছু নেতাকর্মী বাদ পড়েছে। তাদের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখন এটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে জিম্মি করবে কেন? এছাড়া যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে হল ফ্যাকাল্টি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও জানান ছাত্রলীগের এ নেতা। এ বিষয়ে প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে। অনেক সময় চাইলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সব কিছু করা যায় না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৩০ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে মেয়রের চিঠি
পরবর্তী নিবন্ধঝরনা দেখতে এসে ছিনতাইয়ের শিকার ৮ ছাত্র