পাঠকশূন্য পাঠাগার কীভাবে পাঠকে ভরবে

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস আজ

চবি প্রতিনিধি | রবিবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

ফুলগুলি যেন কথা/পাতাগুলি যেন চারি দিকে তার/পুঞ্জিত নীরবতা।’ বই পড়া নিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বইয়ের ভেতরে যে বাক্য ও শব্দ থাকে সেগুলো মস্তিষ্কের ভেতর যেন মনছবি তৈরি করে। কল্পনাশক্তিকে আরো বাড়িয়ে তোলে। মনের ভেতর তৈরি হয় হাজার হাজার চোখ, কান, ঘ্রাণেন্দ্রিয়। বই পড়ার সময়ে আমাদের মস্তিষ্ক এভাবেই আরো সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু পড়া যেন দিন দিন কমে যাচ্ছে। গ্রন্থাগারগুলো পাঠক শূন্যতায় খাঁ খাঁ করছে। প্রয়োজন দেখা দিয়েছে আধুনিকায়নের।

মানুষের পাঠাভ্যাস সৃষ্টি এবং বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারিবেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোর কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে দেশব্যাপী জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালন হয়ে আসছে। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৮ সাল থেকে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর দেশব্যাপী দিবসটি পালন শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও দিবসটি পালিত হচ্ছে।

এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘স্মার্ট গ্রন্থাগার, স্মার্ট বাংলাদেশ’। এ উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে সংবাদ সম্মেলনে ‘স্মার্ট দেশ গঠনে গ্রন্থাগারের ভূমিকা ও করণীয়’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগারিক প্রফেসর নাসির উদ্দিন মুন্সী।

দেশের গ্রন্থাগারগুলোতে দিন দিন পাঠক কমছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলাউপজেলা পর্যায়ে এখন মোট গণগ্রন্থাগারের সংখ্যা ৭১টি। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৯ হাজার। ৫৮ জেলায় মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ ৩৭ হাজার। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে প্রতিদিন ৩ হাজার ৩৬০ জন পাঠক আসেন। অন্যদিকে জেলা পাঠাগারগুলো দৈনিক ব্যবহার করছেন প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার পাঠক।

বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ৯০ লাখ ছাত্রছাত্রীকে বই পড়াচ্ছে। চার হাজার স্কুলে কোনো লাইব্রেরি ছিল না। সেখানে লাইব্রেরি করেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। এছাড়া আরও দুই হাজার বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি স্থাপন করেছে। ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি প্রায় তিন হাজার গণকেন্দ্র ও পাঁচ হাজার কিশোরকিশোরী ক্লাবের মাধ্যমে লাইব্রেরি কার্যক্রম পরিচালনা করে। দেশব্যাপী প্রায় ১৪ লাখ পাঠকপাঠিকা তৈরি করেছে তারা।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার নগরীর নন্দনকাননে অবস্থিত। সেখানে প্রায় দশ লক্ষাধিক বই রয়েছে। সর্বস্তরের জনসাধারণের পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি এবং গ্রন্থাগারের প্রতি আকৃষ্ট করতে গ্রন্থাগারে সম্প্রসারণমূলক কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। যেমন বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতা, হাতের সুন্দর লেখা প্রতিযোগিতা, বইপাঠ প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। এছাড়া গ্রন্থ প্রদর্শনীর আয়োজন এবং বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হয়। কিন্তু সমস্যায় জর্জরিত থাকায় গ্রন্থাগার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন পাঠকরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনির হোসাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ের রেফারেন্স বই প্রয়োজন হয়। অনেক সময় সেগুলো আপডেট থাকে না। যার কারণে দিন দিন পাঠক সংখ্যা কমছে। নিরিবিলি পরিবেশে পড়াশোনা করতে কেউ কেউ পাঠাগারে আসেন। কিন্তু আশপাশে নানা সভা ও অনুষ্ঠানের মাইকের শব্দ পড়ায় ব্যাঘাত ঘটে। এছাড়া সপ্তাহের পাঁচ দিন খোলা থাকে পাঠাগার। পাঠকদের সুবিধার্থে ছয় দিন খোলা রাখা উচিত। বাড়ানো উচিত প্রতিদিনকার সময়সীমাও। প্রায় সব গ্রন্থাগারের দৃশ্য একই। আবার দেখা পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা থাকলেও পাঠক নেই। মূলত মানুষ বই বিমুখ হয়ে পড়ছে।

তবে এক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ভুল রয়েছে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, আসলে আমাদের গ্রন্থাগারগুলোর আধুনিকায়ন করতে হবে। এখন শিক্ষার্থীরা আর গ্রন্থাগারে যাবে না, ঘরে বসে কিভাবে গ্রন্থাগারের সুবিধা ভোগ করতে পারবে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। সকল বই অনলাইন ভার্সনে নিয়ে আসতে হবে। তাহলেই পাঠক বাড়বে। গ্রন্থাগারে না গেলেও পড়ে স্বস্তি পাবে।

কর্মসূচি : চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস চত্বরে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে আজ রোববার সকাল ১০টায় জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদ্বোধন করা হবে। এতে থাকছে চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও উপস্থিত বই পাঠ প্রতিযোগিতা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবিকল যেন পৃথিবী
পরবর্তী নিবন্ধবন উজাড়ের বিপরীতে এক সাফল্যগাথা