পাওয়ার আশায় নয়, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে নিঃস্বার্থভাবে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এম এ মালেক ।। আমাদের সকাল শুরু হয় আজাদী পত্রিকা দিয়ে : চবি উপাচার্য

চবি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৩ জুন, ২০২২ at ৪:১৯ পূর্বাহ্ণ

একুশে পদকে ভূষিত বরেণ্য সাংবাদিক ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেককে সংবর্ধনা দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে চবি উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এই সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার সংবর্ধিত অতিথি এম এ মালেকের হাতে ফুলের তোড়া ও ক্রেস্ট তুলে দেন। চবি উপাচার্য বলেন, এম এ মালেকের মতো গুণীজনকে সংবর্ধনা প্রদানের মাধ্যমে সম্মাননা জানাতে পেরে আমরা নিজেরাই সম্মানিত হয়েছি। সংবর্ধনার জবাবে এম এ মালেক বলেন, বাবার মৃত্যুর পর পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্ব কাঁধে নিতে গিয়ে সরকারি কমার্স কলেজে অধ্যয়ন করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় পরিসরে লেখাপড়ার সুযোগ পাইনি। অথচ যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারিনি, ভাগ্য আজ আমাকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবর্ধনা জুটিয়ে দিয়েছে। বিষয়টিতে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত এবং গৌরবান্বিত বলেও উল্লেখ করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে, রেজিস্ট্রার প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর রাশেদ মোস্তফা, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর মোহাম্মদ মাহবুবুল হক, প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া, দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক, চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর এবং চবির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য গত ২২ বছর ধরে চলমান ‘ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকদৈনিক আজাদী বৃত্তি’ প্রদান করা হয়। এই সময় বৃত্তিপ্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথি এম এ মালেক বৃত্তির পরিসর বাড়াতে বৃত্তির মূলধনের সাথে আরও ৭ লক্ষ টাকা যুক্ত করার ঘোষণা দেন। এ ছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্ধ ছাত্রছাত্রীদের লায়ন্সের মাধ্যমে বৃত্তি প্রদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, এর বাইরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো শিক্ষার্থীর ব্যাপারে সুপারিশ করলে আমরা তাকে সহায়তা করবো।

রেজিস্ট্রার প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথি এম এ মালেক বলেন, পদক পাওয়ার আশা নিয়ে কোনো কাজ করলে পদক পাওয়া যায় না। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে নিঃস্বার্থভাবে। তাহলে পদকই আপনার কাছে আসবে। তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা দৈনিক আজাদী। দীর্ঘ ৬২ বছর যাবৎ এ পত্রিকা গণমানুষের কথা বলে যাচ্ছে। আজাদী এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে তুলে ধরছে। পাশাপাশি সংকট ও সমস্যাকেও চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি জানান, পুরস্কার পাবার আশায় তিনি কখনও কাজ করেননি; নিজের দায়বদ্ধতা থেকে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে সবসময় মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছেন।

হূমায়ুন আহমেদের একটি উক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ হওয়া একটা অসাধারণ ব্যাপার, সেটা সকলে হতে পারে না। আমি সাধারণ হয়ে থাকতে চাই। পদক পাওয়ায় একটি লাভ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুগ যুগান্তরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে একটি লাল সবুজ পতাকা দিয়ে গেছেন। তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, আমার শেষযাত্রায় এই পতাকা বুকে নিয়ে গন্তব্যে যাবো আমি। এটিই আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওনা।

এম এ মালেক আরও বলেন, আজাদী স্বাধীন বাংলার প্রথম সংবাদপত্র। সেদিন আমাদের হেডলাইন ছিলো ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। তিনি সেই জয়বাংলা স্লোগানটিকে জাতীয় স্লোাগান হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার তাঁর বক্তব্যে বলেন, একুশে পদকে ভূষিত এ প্রথিতযশা সাংবাদিককে সংবর্ধনা প্রদান করতে পেরে চবি পরিবার আনন্দিত ও গর্বিত। দৈনিক আজাদীর কর্ণধার এম এ মালেককে একজন সজ্জ্বন ব্যক্তি। তিনি উদারমনা, দানশীল ও সমাজসেবক। এম এ মালেক নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, কর্মস্পৃহা, উদ্যম, আগ্রহ সর্বোপরি নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে সফল মানুষ হয়েছেন। তাঁর কর্মস্পৃহা সমাজের অন্যদের জন্য অনুকরণীয়। প্রসঙ্গক্রমে উপাচার্য বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা দৈনিক আজাদী আঞ্চলিক পত্রিকা হলেও বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে এটি সাধারণ জনগণের মুখপত্র হিসেবে সমাদৃত।

চবি উপাচার্য বলেন, আমার বাবার সকাল শুরু হতো চা, বেলা বিস্কুট আর আজাদী পত্রিকার সাথে। আমাদের সকালও আজাদী পত্রিকা দিয়েই শুরু হয়। মালেক ভাই শুধু যে একজন সাংবাদিক তা না; তিনি জন্মগতভাবেই সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তা সত্ত্বেও তিনি সর্বস্তরের মানুষের প্রতি যে বিনয় আচরণ করেন তা সত্যিই প্রসংশার দাবিদার।

একই অনুষ্ঠানে ২০২১২০২২ সালে রাষ্ট্রপতির ঐচ্ছিক তহবিল থেকে ১২জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

এম এ মালেকের বড় ছেলে ও দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক আজাদী পরিবারের পক্ষ থেকে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভবিষ্যতে আরও বড় করে চবিতে চলমান দৈনিক আজাদী বৃত্তি কার্যক্রম পরিচালনা করার আশা ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান এমন আয়োজনের জন্য।

এম এ মালেকের ছোট ছেলে দৈনিক আজাদীর নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক বলেন, আমার বাবা একুশে পদক পেয়েছেন, আমি এরচেয়ে বেশি কিছু পেয়েছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এমন এক মহৎ মানুষকে বাবা হিসেবে পেয়ে। চবি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ তাঁকে সম্মানিত করার জন্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ মেরামত করে বহরে আনার ভাবনা বিএসসির
পরবর্তী নিবন্ধ১০ বছরেও দেখেনি আলোর মুখ