পাঁচ দিনেও জানা যায়নি নতুন বইয়ের সংখ্যা

মেলা কমিটির দপ্তরেও সঠিক তথ্য নেই

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

বইমেলার প্রধান আকর্ষণ নতুন বই, যা বইমেলাকে ঘিরেই প্রকাশিত হয়। তাই বইমেলায় আসা পাঠক, লেখক ও দর্শনার্থীরা জানতে চান নতুন বইয়ের তথ্য বা সংখ্যা। কিন্তু চট্টগ্রামে বইমেলার পাঁচদিন পার হলেও সে তথ্য কেউ জানাতে পারেননি। মেলায় অংশ নেয়া অধিকাংশ প্রকাশনা স্টলের বিক্রয়কর্মীরাও দিতে পারেননি সঠিক তথ্য। বইমেলা শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বশেষ দিন পর্যন্ত নতুন কয়টা বই এসেছে সে তথ্য নাই আয়োজক কমিটির দপ্তরেও।

অথচ রাজধানীতে অনুষ্ঠিত বাংলা একাডেমির বইমেলায় প্রতিদিন আসা নতুন বইগুলোর তথ্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংগ্রহ করেন আয়োজকরা। এর মধ্যে কয়টি কাব্য, গল্প, উপন্যাস বা সাহিত্যের অন্যান্য শাখার বই সেই তথ্যও সংরক্ষিত থাকে বইমেলার তথ্যকেন্দ্রে। এমনকি প্রতিদিন মাইকিং করে নতুন আসা বইয়ের খবর প্রচার করা হয়। এতে উপকৃত হন মেলায় আসা পাঠক। তারা খুব সহজে পছন্দের বই সংগ্রহ করতে পারেন।

নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে চলছে অমর একুশে বইমেলা। বোয়ালখালী থেকে গতকাল মেলায় আসেন মো. নাজিম উদ্দিন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এ কর্মকর্তা আজাদীকে বলেন, আমাদের দেশে বইমেলাকে ঘিরে বই প্রকাশ করার প্রবণতা বেশি। তাই পছন্দের লেখকের প্রকাশিত নতুন বই সংগ্রহের অন্যতম ভরসার স্থান বইমেলা। কিন্তু মেলায় এসে দেখি নতুন বইয়ের তথ্য পাওয়াটা অনেক কঠিন। অনেক প্রকাশনা স্টলে এবারের মেলায় প্রকাশিত বইয়ের কোনো তালিকা নেই। তাই সাজিয়ে রাখা সবগুলো বইয়ে চোখ বুলিয়ে দেখতে হচ্ছে। যদি তালিকা থাকত তাহলে বাছাই করে পছন্দের বইটা কিনতে পারতাম।

নাজিম উদ্দিনের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে অন্তত ২০টি প্রকাশনা স্টলের বিক্রয়কর্মীর সাথে কথা বলে। ২০টি স্টলের মধ্যে মাত্র ছয়টি স্টলে এবার প্রকাশিত বইয়ের তালিকা পাওয়া গেছে। তবে তালিকায় থাকা সবগুলো বই গতকাল পর্যন্ত মেলায় আসেনি। বেশ কয়েকটি বই আসতে আরো কয়েকদিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন বিক্রয়কর্মীরা।

আপন আলো প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী শামসুদ্দীন শিশির আজাদীকে বলেন, আমাদের প্রকাশনার এ পর্যন্ত ২০টি নতুন বই আসছে। আরো ১০টি কয়েকদিনের মধ্যে আসবে। স্বাধীন প্রকাশনের হৃদয় হাসান বাবু আজাদীকে বলেন, চারটি নতুন বই আসছে। আরো তিনটি আসবে।

গতকাল ছিল বইমেলার পঞ্চম দিন। পাঁচদিনে নতুন কয়টি বই এসেছে জানতে চাইলে বইমেলা পরিচালনা কমিটির দপ্তরের দায়িত্ব থাকা আইউব সৈয়দ আজাদীকে বলেন, মেলায় নতুন আসা বইয়ের তালিকা করা হয়নি। আগামীকাল (আজ) থেকে প্রতিদিন করব।

বইমেলা পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু আজাদীকে বলেন, প্রতিদিন তথ্য দেয়াটা আসলে কঠিন। স্টল থেকেও সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। প্রতিটি স্টল থেকে তথ্য সংগ্রহের মতো লোকবলও সিটি কর্পোরেশন থেকে পাওয়া যায়নি। আজ সোমবার থেকে বইমেলায় আসা নতুন বইয়ের তথ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, মেলার দপ্তর থেকে একটা সার্কুলার দেয়া যেতে পারে। যেন প্রকাশকরা প্রতিদিন নতুন আসা বইয়ের তথ্য দপ্তরে জমা দেন।

এদিকে সাধারণ দর্শনার্থীর জন্য গতকাল মেলার দরজা খুলে বিকেল ৩টায়। তবে শুরুতে পাঠকদর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল কম। সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে বাড়তে থাকে লোক সমাগম। তবে আগের দুদিনের চেয়ে কম। গতকাল বিকিকিনি কম হয়েছে বলেও জানান প্রকাশকরা।

গতকাল মেলায় কথা হয় কবি অভীক ওসমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্টলগুলো ভালো হয়েছে। নিজ উদ্যোগে বেশিরভাগ প্রকাশক খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন। অথচ কয়েক বছর আগে যখন পৃথক মেলা হতো তখন কোনো রকমে শামিয়ানা দিয়ে স্টলগুলো সাজানো হতো। তিনি বলেন, এবার প্রচুর পাঠক আসছেন। তবে বিক্রি কম হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে বলা যায় সুন্দর আয়োজন।

কবি শিশির দত্ত বলেন, মনে হচ্ছে বাংলা একাডেমির বর্ধিত অংশ। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়নি। যেমন মেলামঞ্চে পুঁথি পাঠের আয়োজন করা যেত। চট্টগ্রামের লেখকদের যেভাবে উপস্থাপন করা দরকার সেভাবে করা হচ্ছে না।

প্রথমা প্রকাশনের বিক্রয়কর্মী মো. ইরফাতুর রহমান অনিক বলেন, আসিফ নজরুলের সংবিধান বিতর্ক এবং থ্রিলারধর্মী বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের স্টলে ক্লাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাজন বড়ুয়া বলেন, বেচাকেনা মোটামুটি হচ্ছে।

নতুন বইয়ের খবর : গতকাল মেলায় আসে নতুন বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আজাদ বুলবুলের ‘কাপ্তাই বাঁধে ডুবে যাওয়া রাঙ্গামাটি’, আনোয়ারা আলমের ‘উড়ো মেঘের ছায়া’, জসিম উদ্দিন খানের ‘মন রাঙাবো নতুন করে’ এবং আফছার উদ্দিন আহাম্মদ চৌধুরীর ‘অশ্রুমালা’।

উড়ো মেঘের ছায়া’র ফ্ল্যাপে লেখা হয়, ‘মানুষে মানুষে সম্পর্কের রসায়ন বড় রহস্যময়। যদিও সম্পর্ক মানে ভাবের আদানপ্রদান তবুও এক মসৃণ সরল পথ নয়। এক রৈখিকও নয়। তবে পারস্পরিক বন্ধনের ভীত হচ্ছে বিশ্বাস। কিন্তু এটির এখন বড় অভাব বিশেষত দাম্পত্য বা প্রেমের সম্পর্কে। যে ভালোবাসা এক সময় রঙিন স্বপ্ন দেখায়চারপাশ ভরিয়ে দেয় আবার সম্পর্কের টানাপোড়েনে তিক্ততার বিষাদ নেমে আসে। তবে কি সম্পর্ক প্রকৃতির মতো রঙ বদলায়। কখনো বসন্ত, কখনো বা খরা। এ গ্রন্থের বেশির ভাগ গল্পের বুননে এই বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।’

কাপ্তাই বাঁধে ডুবে যাওয়া রাঙ্গামাটি’র ভূমিকায় বলা হয়, গ্রন্থটি মূলত ওরাল হিস্ট্রি বা মৌখিক ইতিহাসধর্মী রচনা। এ গ্রন্থে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে ১৯৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা শহর রাঙ্গামাটি ও সন্নিহিত বিশাল এলাকা জলমগ্ন হয়ে তলিয়ে যায়। বাঁধের পানিতে ডুবে যায় কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী নাগরিক কোলাহল, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনা এবং ঐতিহ্যের স্মারক চাকমা রাজবাড়িসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। সর্বস্ব হারানো উদ্বাস্তুদের হৃদয়ভাঙা হাহাকার, তাদের চিরচেনা জন্মভূমির পরিচয় আমাদের অজ্ঞাতেই হারিয়ে যেতে বসেছিল। সেজন্য ডুবে যাওয়া রাঙ্গামাটির স্বরূপ ও বাঁধভাসী মানুষের সামাজিক ইতিহাস অন্বেষণ এবং বাঁধ নির্মাণের বিভিন্ন ধাপে প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গের অনুভব অনুভূতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

মন রাঙাবো নতুন করে’ গ্রন্থে রয়েছে শিশু ও কিশোর উপযোগী ২০টি ছড়াকবিতা। যেখানে লেখক শব্দের খেলায় শিশুকিশোরদের কৌতূহল ও উদ্দীপনা তুলে ধরেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে অস্ত্র ও ১০টি ল্যাপটপসহ চোর চক্রের ৩ সদস্য আটক
পরবর্তী নিবন্ধশান্তি প্রতিষ্ঠার স্তম্ভ হিসেবে বেতারকে গড়ে তুলতে চায় জাতিসংঘ