পাঁচ দফা দাবিতে আজ থেকে লাইটারেজ শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট

বন্ধ হয়ে যাবে অভ্যন্তরীণ রুটে পণ্য পরিবহন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১১ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে প্রত্যাহার, পতেঙ্গা থানার ওসিকে প্রত্যাহার এবং চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ ভোর থেকে লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এতে বন্ধ হয়ে যাবে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল। বন্ধ হয়ে যাবে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সতর্কতার সাথে দেখছে বলে জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, লাইটারেজ জাহাজের শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরে পতেঙ্গার ১৫ নম্বর থেকে ১৮ নম্বর ঘাট এলাকায় অবস্থান করতেন এবং স্থানীয় জেটি ব্যবহার করে যাতায়াত করতেন। কিন্তু গত বছর লাইটারেজ জাহাজগুলোকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে পতেঙ্গা সী বিচ এলাকায় নোঙর করতে এবং ওই পথে যাতায়াত করতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ওই এলাকায় কোনো জেটি না থাকায় শ্রমিকেরা ওঠানামা করতে পারতেন না। তারা স্পিড বোটের মাধ্যমে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছিলেন। পতেঙ্গা সী বিচের স্পিড বোট মালিকেরা প্রতিজনের কাছ থেকে পাঁচশ’ টাকা নিয়ে তাদের জাহাজে ওঠানো এবং নামানোর কাজ করতেন। বিষয়টি খুবই ব্যয়বহুল হওয়ায় তা অনেক শ্রমিকের পক্ষেই সম্ভব ছিল না। পরবর্তীতে চাইনিজ ঘাট এলাকা দিয়ে শ্রমিকেরা সাম্পানে চলাচল করতে থাকেন। এতে দীর্ঘ সময় এবং ভোগান্তি চরমে ওঠে।
এক পর্যায়ে লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করে। ধারাবাহিক বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব

অর্থায়নে পতেঙ্গা সী বিচের সন্নিহিত এলাকায় চরপাড়া নামে একটি ঘাট নির্মাণ করে। লাইটারেজ শ্রমিকেরা ওই ঘাট ব্যবহার শুরু করেন। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই ঘাটটি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের নিকট ইজারা দিলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে শুরু করে। শ্রমিকেরা বিনে মাশুলে ঘাটটি ব্যবহারের সুযোগ চান। কিন্তু ঘাটে দশ টাকা মাশুল নির্ধারণ করে দেয়া হয়। শ্রমিকদের অভিযোগ ঘাটে বাধা নির্দিষ্ট নৌকাগুলো ইচ্ছেমাফিক ভাড়া আদায় করতে থাকে। শ্রমিকদের সাথে ইজারাদারের লোকজনের বিরোধ থেকে প্রতিদিনই নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে।
গত ৩ নভেম্বর সংঘটিত এক ঘটনার জের ধরে শ্রমিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয় ইজারাদারের লোকজনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে পতেঙ্গা থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে সাধারণ জিডি নেয় বলে অভিযোগ করে শ্রমিক নেতারা জানান, আমাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা চরম আকার ধারণ করেছে। এক পর্যায়ে আমরা নদীর অপর পাড়ে পারকি বিচ এলাকা থেকে জাহাজে ওঠা নামার কাজ চালাতে শুরু করি। লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করে ঘাট বন্ধ করে দেন। এর আগে চাইনিজ ঘাট এলাকা থেকেও শ্রমিকেরা ওঠানামার চেষ্টা করলে বন্দর কর্তৃপক্ষ সেখানেও অভিযান পরিচালনা করে। জসিম উদ্দিন বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ লাইটারেজ শ্রমিকদেরকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করছে না। তাদের ইজারাদারের হাতে জিম্মি করার যাবতীয় কৌশল বন্দরের তরফ থেকে নেয়া হচ্ছে। লাইটারেজ শ্রমিকদের ওপর হামলা, নির্যাতন, লাঞ্ছনা এবং অপমানের ঘটনা প্রাত্যহিক বলে মন্তব্য করে মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন আরো বলেন, আমাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা বন্দরের বর্তমান চেয়ারম্যানের প্রত্যাহার চাই। আমরা পতেঙ্গা থানার ওসির প্রত্যাহার চাই। আমরা চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল চাই। আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয়া না হলে আর কোনো শ্রমিকই কাজে যোগ দেবে না। তিনি বলেন, আজ ভোর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙর কিংবা বন্দরের ভিতরে কোনো লাইটারেজ শ্রমিক কোনো কাজ করবেন না। দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি একেবারে অনভিপ্রেত। এই ধরনের দাবি দাওয়ার কোনো যুক্তি এবং ভিত্তি নেই। প্রকৃতপক্ষে শ্রমিকদের স্বার্থেই বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি ঘাট তৈরি করে দিয়েছে। শ্রমিকদের সুবিধার জন্যই এই ফ্যাসিলিটি ক্রিয়েট করা হয়েছে। কিন্তু ঘাটটি তো কাউকে না কাউকে পরিচালনা করতে হবে। না হয় ঘাটের শৃংখলা রক্ষা করবে কে? ওই ঘাট ব্যবহার করে একটি দশ জনের নৌকায় যদি হুড়োহুড়ি করে ত্রিশ জন ওঠে এবং নৌ দুর্ঘটনায় শ্রমিক মারা যায় তাহলে তার দায় কে নেবে? বন্দর সচিব বলেন, সবদিক বিবেচনা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ ঘাটটি ইজারা দিয়েছে এবং ইজারাদারকে শ্রমিকদের থেকে শুধুমাত্র দশ টাকা মাশুল নেয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে শর্তসাপেক্ষে ইজারা দেয়া হয়েছে। এই দশ টাকাও লাইটারেজ জাহাজের মালিকেরা পরিশোধ করেন। কিন্তু শ্রমিকেরা এই ঘাট ব্যবহার না করে সী বিচের কাছে গিয়ে বাঁধ কেটে একটি ঘাট নির্মাণ করে অবৈধভাবে পরিচালনা করতে শুরু করেছে। ওই ঘাটের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ ওই অননুমোদিত ঘাটটি বন্দর কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিক দায়িত্ববোধ থেকেই বন্ধ করে দিয়েছে। লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রসঙ্গে বন্দর সচিব বলেন, তাদের সাথে আমাদের আলাপ আলোচনা চলছে। তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর এবং বহির্নোঙর থেকে সারা দেশে পণ্য আনা নেয়ায় অন্তত হাজার দেড়েক লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজে শ্রমিকের সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি বলেও সূত্র জানায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিজের মেয়েকে হারিয়ে অন্যের সন্তান চুরি
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ৫ লাখ ৩৫ হাজার কার্ডধারী পরিবার পাবে টিসিবি পণ্য