পর্যটন শিক্ষা কৃষিতে বদলে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম

আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস আজ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শনিবার , ১১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস আজ। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকৃতপক্ষে পার্বত্য চুক্তির পর গত ২৪ বছরে সরকারি-বেসরকারি নানা উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তির সম্পাদন করেন। চুক্তির পর থেকে বদলে যাচ্ছে পাহাড়। সরকার বেসরকারি বিনিয়োগে পাহাড়ে কৃষি, শিল্প, পর্যটন, শিক্ষা খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। একসময়ের পিছিয়ে থাকা পাহাড়ি জনপদ এখন অগ্রসর হচ্ছে।
চুক্তির আগে পাহড়ে অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি কারণে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা ছিল না। তবে চুক্তি পরবর্তী সময়ে পাহাড়ের সৌন্দর্য আবিষ্কারে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসতে শুরু করে। বর্তমানে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যাক পর্যটক ভ্রমণ করে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য এলাকায়। পর্যটন কর্পোরেশন খাগড়াছড়ি ইউনিট ব্যবস্থাপক এ কে এম রফিকুল আলম জানান, চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে পর্যটনের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। চুক্তির আগে নিরাপত্তা সংকটের কারণে পাহাড়ে হাতেগোনা পর্যটকের আসত। এখন দৃশ্যপট পাল্টেছে। বর্তমানে কেবল খাগড়াছড়িতেই প্রতিমাসে অন্তত ২০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করছে। মাসে এখাতে লেনদেন ৯ থেকে ১০ কোটি টাকা।
শান্তি চুক্তি পূববর্তী সময়ে খাগড়াছড়িতে সড়ক অবকাঠমোর তেমন উন্নয়ন হয়নি। গত দুই দশকে সড়ক সম্প্রসারণের পাশাপাশি বেইলী সেতুর পরিবর্তে সড়কে বসেছে স্থায়ী সেতু। সড়ক উন্নয়ন হওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষি পণ্য সরবরাহ বেড়েছে। খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকারের অর্থায়নে চুক্তির পরে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা বাঘাইহাট সড়ক, বাঘাইহাট-মাচালাং-সাজেক সড়ক উন্নয়ন,দীঘিনালা- ছোটমেরুং, চংড়াছড়ি-লংগদু সড়ক উন্নয়ন, জেলা সড়ক উন্নয়ন, মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি-জালিয়াপাড়া সড়ক উন্নয়ন (১ম পর্যায়) ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইনপ্রুভমেন্ট প্রকল্প, বিভিন্ন সড়কে পিসি গার্ডার সেতু, আরসিসি সেতু নির্মিত হয়েছে। এছাড়া সড়ক উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প চলমান রয়েছে।

খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা জানান, আগে সড়কের আতংক ছিল বেইলি ব্রিজ। ইতোমধ্যে সরকারের অর্থায়নে সড়ক বিভাগ ৭০টি পাকা সেতু নির্মাণ করেছি। এতে পাহাড়ের সড়ক যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন হয়েছে। পুরো জেলায় বেইলি সেতু রয়েছে মাত্র ১০টি। এসব বেইলি সেতু আর থাকবে না। প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্প পাশ হলে পাকা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে। পাকা সেতু নির্মাণ হওয়ায় কৃষি ও পর্যটনে খাতে গতি এসেছে।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.শফি উদ্দিন বলেন, বর্তমানে ৭৫ হাজার মানুষ সরকারি কৃষির উপর নির্ভরশীল। শান্তিচুক্তি পরবর্তী সময়ে কৃষি সম্প্রসারিত হয়েছে। নিরাপত্তা ঘাটতি না থাকায় দুর্গম পাহাড়েও কৃষির সম্প্রসারণ করা যাচ্‌েছ। প্রায় ৬৯ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বর্তমান সরকারই পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করেছে। চুক্তির পরে পর্যটন, কৃষি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। জেলার অর্থনীতি পর্যটন নির্ভর। পর্যটকদের নিরাপত্তার কোনো সংকট নেই। ফলে পর্যটন খাত দিন দি সমৃদ্ধ হচ্ছে। আমাদের কৃষিতেও অগ্রগতি হয়েছে। পাহাড়ি জেলা হলেও খাগড়াছড়ি এখন ধান উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতাহসান, মিথিলা শবনম ফারিয়া নজরদারিতে
পরবর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে রাজপুণ্যাহ শুরু, নানা আয়োজন