পরিবার ছাড়া প্রবীণদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা অসম্ভব

| শনিবার , ১ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে প্রবীণদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দেশের অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং শিশু জন্মের হার কম হওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী প্রবীণ নারী ও পুরুষের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বর্তমানে দেশের প্রবীণ মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ, যারা সংখ্যায় ১ কোটি ৩০ লাখ। যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি হলো দারিদ্র্যসীমার নিচে। তাদের সমস্যা অনেক। প্রবীণ নারীরা শুধু বার্ধক্যজনিত রোগেই ভোগেন তা নয়, বরং সারাজীবন তাঁদের বঞ্চনা আর গঞ্জনা থেকে স্বাস্থ্যহানি ঘটে। দীর্ঘদিন তাঁরা অসুস্থ থেকে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন না।
বাংলাদেশ এ মুহূর্তে প্রবীণবিষয়ক বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। প্রবীণেরা বিপদাপন্ন ও দারিদ্র্যের শিকার, একাকিত্বে জর্জরিত, সরকারি সেবা কার্যক্রমে প্রবীণদের প্রবেশগম্যতা সীমিত এবং সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈষম্যের শিকার। প্রবীণদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবলয় তৈরি জরুরি বলে তাঁরা মনে করেন।
এ কথা না বললেও চলে যে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা সমস্যায় পড়েন প্রবীণেরা। প্রবীণদের ভাতা দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান কিংবা আয়ের সুযোগ তাঁদের ক্ষমতায়ন করবে। পরিবারের সদস্যদেরও প্রবীণ অধিকার সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। কারণ পরিবার ছাড়া প্রবীণদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা অসম্ভব। এতেই সমাজে প্রবীণের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে।
একজন মানুষ প্রবীণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বার্ধক্যের চারটি সমস্যার মোকাবেলা করেন। নিঃসঙ্গতা, জরা ও ব্যাধি, দারিদ্র্য এবং আমাদের পারিবারিক বন্ধনের শিথিলতা। এ সম্পর্কে ভাবতে হবে সবাইকে। কীভাবে এসব সমস্যার মোকাবেলা করা যায়, সেটা চিন্তা করে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের সমন্বয়ে প্রবীণদের কল্যাণে কাজ করতে হবে। দরিদ্র প্রবীণদের সমস্যা আরো প্রকট।এছাড়া উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য প্রবীণ নিবাস নির্মাণ ব্যয়বহুল।এসব বিবেচনা করে আমরা হতদরিদ্রদের জন্য প্রবীণ নিবাস প্রতিষ্ঠা করা দরকার।
সমাজের দিকে তাকালে দেখা যাবে, প্রবীণদের ওপর নানা রকম নির্যাতন আছে, বৈষম্য আছে। দরিদ্র প্রবীণেরা প্রথম তাদের ক্ষমতা ও সম্মান হারাচ্ছেন এই পরিবারের মধ্যেই। যে সমাজে প্রবীণ জনগোষ্ঠী যত সমৃদ্ধ, তাদের শেকড়ও তত শক্ত। আমরা আমাদের সমাজের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সেই শেকড়টি যেন উপড়ে ফেলছি। আর এর ফলে আমাদের সেই মজবুত গাঁথুনিও আর নেই। এসব বিষয়ে পরিবারের সদস্যদেরই খেয়াল রাখতে হবে।
প্রবীণদের সম্পদ হিসেবে চিন্তা করতে হবে। প্রবীণদের শারীরিক সক্ষমতা হয়তো সীমিত থাকে, কিন্তু তাঁদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান থাকে অনেক। স্থানীয় আপদ, পরিবেশের পরিবর্তন সম্পর্কে প্রবীণদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলার কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।
মনে রাখতে হবে যে, পরিবারই প্রবীণদের জন্য শ্রেষ্ঠ আশ্রয়স্থল। প্রবীণদের অবহেলা করা মোটেই সমীচীন নয়। বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবা পরিবারের সবার সঙ্গে আনন্দে দিন কাটাবেন। এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না এবং এটাই হওয়া উচিত। কিন্তু সমস্যা বেঁধেছে বাস্তবতা নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যে ছেলে নিজের পরিবারের ভরণ-পোষণ করতে পারেন না, তিনি কীভাবে মা-বাবার ভরণ-পোষণ করবেন? এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জীবিকার প্রয়োজনে দেশের ভেতরে ও বাইরে অভিবাসন। ছেলে-মেয়েকে যদি নিজ গ্রাম বা দেশের বাইরে আবাস গড়ে তুলতে হয় এবং মা-বাবাকে যদি সেখানে নেয়া সম্ভব না হয় বা তারা যেতে না চান তাহলে সন্তানরা কীভাবে তাদের দেখভাল করবেন? আর যাদের সন্তান নেই এবং যারা বিধবা অথবা বিপত্নীক, তাদের কী হবে? যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও মা-বাবাকে অবহেলা করে, তাদের ক্ষেত্রে মা-বাবার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ বর্ণিত শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু যারা আর্থিকভাবে অসমর্থ বা দেশের ভেতরে বা বাইরে অভিবাসনের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মা-বাবার দেখভাল করতে পারেন না, তাদের সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখতে হবে। তারা যাতে মা-বাবার দেখভালের জন্য পরিবারের বাইরে কোনো ব্যবস্থা করতে পারেন, সে বিষয়ে সহায়তা করতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা, সামাজিক বন্ধন জোরদার করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যে কনসেপ্ট প্রতিষ্ঠা জরুরি, সেটা হলো : প্রবীণ মানেই দুর্দশাগ্রস্ত নন। প্রবীণদের নিজেদেরও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পরিবার ছাড়া প্রবীণদের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা অসম্ভব। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সমান্তরালে সচেতন হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে