পরশ্রীকাতর না হয়ে নিজেকে সুখি করে তুলতে হবে

গৌরী প্রভা দাশ | শনিবার , ৩ অক্টোবর, ২০২০ at ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ভালো চিন্তা এবং সন্তুষ্টিতে জীবন অধিক সুন্দর হয়ে থাকে। জীবন সুন্দর এবং শোভন। সুখ দুঃখ আক্ষেপ আর সন্তুষ্টি জীবনের স্বাভাবিক উপজীব্য। কিন্তু আমাদের অনেকের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা যথেষ্ট ভালো অবস্থানে থাকার পরও জীবন নিয়ে দারুণ অসন্তুষ্টিতে ভোগেন। সুযোগ পেলেই করতে থাকেন নানান অভিযোগ। আসলে যে যার অবস্থানে থেকে নিজের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের পাশাপাশি সুস্থ ও সুন্দরভাবে জীবনকে অতিবাহিত করতে পারলেই তা অধিক অর্থবহ হয়। ঠিক তেমনি সুস্থ থাকা কতটা আনন্দের কেউ তা তখনই বুঝতে পারে যখন সে অসুস্থ হয়। যদিও বেশিরভাগ মানুষ নিজের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। এর মধ্যে আবার অনেকেই আছেন যারা নিজেদের ঘাটতিগুলো ঢাকতে চট করে অন্যের উদাহরণ টেনে আনেন। আমার এক সহকর্মী ছিলেন যিনি সব সময় অন্তর্জ্বালায় ভুগতেন এই ভেবে তার চেয়ে কম ভালো রেজাল্টধারীরা কেন ভালো অবস্থানে আছেন! অনেক সময় চাকুরির ক্ষেত্রে ভালো রেজাল্টের চেয়ে অন্যান্য গুণাবলীও প্রভাব ফেলে সেটা তিনি বুঝতে চাইতেন না। তিনি প্রায়ই বলতেন ওদের হয়তো মামা চাচার হাত বা সুপারিশ আছে। সে রকম সুযোগ পেলে তিনি আজ আকাশচুম্বী সফলতা বয়ে আনতেন জীবনে। অনেকে আবার আছেন এরকম যারাকাউকে পেশাগত বা পারিবারিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত দেখলে নিজের কাজের গুরুত্ব ও চাপ সবার সামনে তুলে ধরে বোঝাতে চান যে, এতোটা চাপ না থাকলে তিনি এর চেয়েও ভালো কিছু করতে পারতেন। কেউ কেউ আবার কথায় কথায় নিজের ভাগ্যকে দূষতে থাকেনযেন সৃষ্টিকর্তা সব মন্দ তার কপালেই লিখে রেখেছেন। আসলে এদের মনোজগতে যে ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনের চেষ্টা না করে, নিজেকে বদলানোর চেষ্টা না করে ক্রমাগত ভাগ্য বা অন্যকে দোষারোপ করতেই তাদের অধিক পছন্দ। তারা সহজ বিষয়কে সহজভাবে নিতে চেষ্টা করেন না তাই বর্তমানকে উপভোগ করতে পারেন না। অযাচিত ভবিষ্যত আশংকা কিংবা দুর্ভাবনা তাদের কুরেকুরে খায়। ক্রমাগত তারা নিজেদের দুঃখী, মন্দভাগ্যের বা বঞ্চিত ভাবতে ভালোবাসেন।

কারো সৌভাগ্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে মনোঃকষ্টে ভোগা কিংবা অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করতে গিয়ে নিজের কাছে নিজেকে হেয় করাটা মোটেই সমীচিন নয়। এক্ষেত্রে যেভাবে আছে সেভাবেই থাকা ভালো। আসলে সুপিরিয়রিটি বা ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভোগা মানুষের সহজাত প্রবণতার দুটো দিক। তা জন্মগতভাবেই মানুষের মধ্যে তৈরি হতে থাকে কিন্তু সেটি যখন চরম জটিলতার পর্যায়ে চলে যায় তা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই আমাদের উচিত নিজের চেষ্টার পর যদি অবস্থার উন্নতি না হয় তবে যে যে অবস্থানে আছে সে ভাবেই থাকা। অন্যের প্রতি পরশ্রীকাতর না হয়ে নিজেকে সুখি করে তুলতে সচেষ্ট হওয়া।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশাহ আলমগীর মাইজভাণ্ডারীর স্মরণসভা
পরবর্তী নিবন্ধপ্রফেসর এ.জে.এম নুরুদ্দীন চৌধুরী স্মরণে