পরম্পরায় আগস্ট ১৫ ও ২১

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ১৯ আগস্ট, ২০২৩ at ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার অমর পঙ্‌ক্তি ‘অসত্যের কাছে কভু নত নাহি হবে শীর, ভয়ে কাপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করেই ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্বাধীনসার্বভৌম বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির পদে ইস্তফা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী রাষ্ট্রপতি নিয়োগপ্রাপ্ত হন। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও তাঁর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনার মূলমন্ত্র ছিল শোষণমুক্ত জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এরই আলোকে ১৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ অক্ষত রেখে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ঠিক পরের দিন রমনা রেসকোর্স ময়দানকে সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে নামাকরণের ঘোষণা এবং সরকারি আদেশে মদ, জুয়া, হাউজিসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেন।

১৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালের হাইকোর্ট অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে হাইকোর্ট গঠন করেন। দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ২১ জানুয়ারি ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেন। ২৪ জানুয়ারি পাকসামরিক জান্তাদের সহযোগী হয়ে এদেশে যারা মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন মানবতা বিরোধী অপরাধকর্মে জড়িত বা দালালী করেছে, তাদের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ৩০ এবং ৩১ জানুয়ারি মুক্তিমুজিব বাহিনীর সকল সদস্যবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর নিকট তাঁদের রক্ষিত অস্ত্রসমর্পণ করে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতির উদ্দেশ্যে বেতার ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘শোষণমুক্ত সোনার বাংলা কায়েমই আমাদের লক্ষ্য’। স্বাধীনতাকে পরিপূর্ণভাবে অর্থবহ করার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অপরিমেয় সাফল্যগাঁথায় অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতিতে বাংলাদেশ যখন নতুন অভিযাত্রায় পদার্পণ করেছিল, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতার হিংস্র কৌশলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত হয় সভ্যসমাজের ইতিহাসে সর্বনিকৃষ্ট, নৃশংস ও বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু হত্যার সম্ভবত প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবী নামক এই গ্রহের মানচিত্রে লালসবুজের পতাকাবাহী প্রাণবিসর্জন ও ত্যাগের মহিমায় অবিনশ্বর ইতিহাসকে পাল্টে দিয়ে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করা। নির্বোধ ঘাতকচক্রের বোধদয়ে অধীত ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে অন্ধকারের শক্তির কুৎসিত অবগাহনে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী শক্তিকে পরাভূত করে দেশকে অকার্যকর করে অন্ধকারের গভীর গহ্বরে নিপতিত করা। বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতাসহ পরিবারের প্রায় সকল সদস্যদের শাহাদাৎ বরণের অল্পসময়ের মধ্যেই কারাগারে বন্দী রেখেও নিষ্ঠুর কতিপয় সেনা সদস্য খুনী মোশতাকের আজ্ঞাবহ হয়ে কারাগারের অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জাতিকে শুধু বঙ্গবন্ধু শূন্য নয়; বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনায় অবিচল দেশপ্রেমিক সহযোদ্ধাদেরও নিঃশেষ করে দিয়ে জাতিকে পরিপূর্ণ নেতৃত্ব শূন্য করার অপচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

প্রায় সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেড় মাস অতিক্রমকালে খন্দকার মোশতাক ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএইচ রহমান স্বাক্ষরিত ‘দি বাংলাদেশ গেজেট, পাবলিশড বাই অথরিটি’ শিরোনামে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়। ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকার প্রদেয় ধরিত্রীর অতি উচুমার্গের সর্বস্বীকৃত বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানকে কলুষিত করার কদর্য অপচেষ্টার অধ্যায় নির্মিত হয়। এদিন ১৯৭৫ সালের ৫০ নং অধ্যাদেশ হিসেবে পরিচিত আইনটি ১৯৭৯ সালে সংসদ কর্তৃক অনুমোদন দেওয়া হয় এবং পঞ্চম সংশোধনীর পর সংশোধিত আইনে বাংলাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই জঘন্য আইন প্রবর্তন করার পিছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকন্ডের বিচার চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়া।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রয়াত সভাপতি বিশিষ্ট মেধাবী আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী জনাব আবদুল মতিন খসরুর গণমাধ্যমে প্রকাশিত নিবন্ধে তিনি বলেছেন, “বিশ্বে অনেক মহাপুরুষ নিহত হয়েছেন অজ্ঞাত আততায়ীর হাতে। কিন্তু কোথাও একই পরিবারের সব সদস্যকে একসঙ্গে হত্যার নজির নেই। যে কোন হত্যাকান্ডের বিচারের দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়ে থাকে। খুনিরা অজ্ঞাত হলেও খুঁজে বের করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর খুনীরা ছিল আত্মস্বীকৃত। হত্যাকাণ্ডের পর তারা প্রকাশ্যে বলেছিল ‘আমরা শেখ মুজিবকে হত্যা করেছি।’ ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরঅক্টোবর মাসে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তাদের এই স্বীকারোক্তির খবর প্রকাশ পেয়েছিল। এরপরও তাদের গ্রেফতার করা হয়নি; বরং ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে জাতির পিতার হত্যার বিচার আটকে দেওয়া হয়েছিল। এ থেকে প্রমাণিত হয় এ হত্যাকাণ্ডে খন্দকার মোশতাক ও জিয়ার শুধু মৌন সম্মতিই ছিল না, বরং তারাই ছিল হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড বা কুশীলব।”

১৯৭৫ পরবর্তী মতবিরোধবিশৃঙ্খলায় বিভাজিত বঙ্গবন্ধুহীন আওয়ামী লীগের প্রথম জাতীয় সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে দলে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। মূলত বিরাজিত সকল অসঙ্গতিবিভ্রান্তিঅন্ধকারের শক্তির সকল কুৎসিত পরিকল্পনাকে নসাৎ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা পুনরুদ্ধার ব্রতে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনা ও বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত সকল দার্শনিক ভিত্তিকে পুঁজি করে অসীম সাহসিকতার সাথে তিনি দেশে ফিরার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর শেষে দেশ ও দলের কঠিন দুঃসময়ে সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞাকে অবজ্ঞা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন দেশোদ্ধারে অবিচল প্রত্যয়ী বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

দেশে ফিরেই দলের সভাপতির অর্পিত দায়িত্বভার গ্রহণ করে গড়ে তোলেন সামরিক সরকারবিরোধী গণআন্দোলন। ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের ক্ষমতায় আরোহণকে অবৈধ ঘোষণা করে এরশাদ বিরোধী দুর্বার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার আদায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বহুবার সামরিকস্বৈরশাসকদের রোষাণলে পড়েছেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দলীয় ৩১ নেতাকর্মীসহ তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে তাঁর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মিছিলে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ ও বিডিআর নির্বিচারে গুলি চালায়। মহান স্রষ্টার অপার কৃপায় তিনি জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হলেও নিহত হয় ১১ জন সাধারণ নেতাকর্মীসমর্থক। ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে স্বৈরচারী এরশাদ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিলেন। দেশের প্রতিটি আন্দোলনসংগ্রামে তিনি একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে তিনি সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম শুরু করেন।

২০০১ সালের ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে চার দলীয় ঐক্যজোট সরকারের দীর্ঘ পাঁচ বছরের দুর্নীতিঅর্থপাচারসন্ত্রাসঅপশাসনমানবাধিকার লঙ্ঘনে জাতি চরম হতাশায় নিমজ্জিত ছিল। নির্বাচনে জয়লাভ করার পরক্ষণেই ক্ষমতাকে স্থায়ীভাবে পাকাপোক্ত করতে একের পর এক দীর্ঘ মেয়াদী ঘৃণ্য অপকৌশল প্রয়োগে ছিল অতিশয় তৎপর। দেশব্যাপী বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘুদের উপর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। তাদের ঘরবাড়ি ভাঙ্‌্‌চুরজ্বালিয়ে দিয়ে এবং হত্যার মাধ্যমে চলছিল বীভৎসকর নারকীয় উৎসব। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের বিভীষিকার ২৯ বছর পর পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট নির্মিত হয় নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ আরেক অধ্যায়। ২০০৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু এভেনিউতে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুনীতিবিরোধী’ সমাবেশে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একের পর এক গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। তিনি অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হয়েছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী। এছাড়াও গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন কয়েক শত নেতাকর্মী। স্প্লিন্টারের অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে ঘটনার দেড় বছর পর মারা যান ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান মতে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মোট ১৯ বার হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। তাঁকে হত্যা চেষ্টার ঘটনাগুলোর মধ্যেনিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হুজিবি কর্তৃক ২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় সমাবেশস্থল ও হেলিপ্যাড়ের নিকটে দুটি শক্তিশালী বোমা এবং ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে নির্বাচনী জনসভায় বোমা পুঁতে রাখা, ২০০১ সালের ৩০ মে খুলনায় রূপসা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে হত্যার পরিকল্পনা, ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট ফ্রিডম পার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে গুলিবর্ষণ ও গ্রেনেড হামলা, ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চতুর্থ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের সময় ধানমন্ডির গ্রীন রোডে ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় গুলি ছোড়া, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রেনমার্চ করার সময় পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে ট্রেনের বগি লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ, ১৯৯৫ সালের ৭ মার্চ শেখ রাসেল স্কয়ারে সমাবেশে চালানো সশস্ত্র হামলা ও ১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু এভেনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছোড়া ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য।

১৪ আগস্ট ২০২৩ গণমাধ্যমে প্রকাশিত ১৫ আগস্ট নিয়ে লেখা প্রচণ্ড হৃদয়গ্রাহীমর্মস্পর্শী ‘বেদনায় ভরা দিন’ শীর্ষক নিবন্ধের উপসংহারে বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা লিখেছেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের রক্তাক্ত বেদনার আঘাত বুকে ধারণ করে আমার পথচলা। বাবা মা ভাইদের হারিয়ে ৬ বছর পর ১৯৮১ সালের ১৭ই মে দেশে ফিরে আসতে পেরেছি। একটি প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছি, যে বাংলাদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, তা ব্যর্থ হতে পারে না। লাখো শহীদের রক্ত আর আমার বাবামা ভাইদের রক্ত ব্যর্থ হতে আমি দেব না। আমার চলার পথ খুব সহজ ছিল না, বারবার আমার উপর আঘাত এসেছে। মিথ্যা অপপ্রচার, গুলি, বোমা ও গ্রেনেড হামলার শিকার হতে হয়েছে আমাকে। খুনি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া বিভিন্ন সময় বলেছিল, ‘শত বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও কখনও হতে পারবে না।’ এর পরেই তো সেই ভায়াবহ ২০০৪ সালের ২১এ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানবঢাল রচনা করে সেদিন আমাকে রক্ষা করেছিলেন। উপরে আল্লাহ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আর বাংলাদেশের জনগণই আমার শক্তি। আমার চলার কণ্টকাকীর্ণ পথে এরাই আমাকে সাহায্য করে চলেছেন। তাই আজকের বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।”

মহান স্রষ্টার অফুরন্ত রহমতে বারবার কদর্য হত্যাচেষ্টা থেকে নিজকে মুক্ত করতে পারলেও দেশ এখনও কোনভাবে নিরাপদ মাতৃভূমি নয়। পাকিস্তানি হায়েনাদের নরপশুতুল্য দোসরতাদের বশংবদ বর্ণচোরাদের ছদ্মবেশে বর্তমান দল ও সরকারে অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে প্রবল গুঞ্জন রয়েছে। জনশ্রুতিমতে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুতে কতিপয় কুশীলবদের সাদা চুলগোঁফক্ষেত্রবিশেষে দাড়ি সম্বলিত তথাকথিত বঙ্গবন্ধু গবেষকবঙ্গবন্ধু চেয়ার দখলে নেয়া অর্বাচীন অতিকথনে ব্যতিব্যস্ত ব্যক্তিদের মুখোশ উন্মোচন জরুরী হয়ে পড়েছে। দেশের যেকোন অঞ্চলে সৎদক্ষযোগ্যনির্ভীকদেশপ্রেমিক চৌকশ বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে পর্যাপ্ত বস্তুনিষ্ঠ যাচাইবাছাই প্রক্রিয়ায় এদের চিহ্নিত করে যথার্থ বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ১৫ বা ২১ আগস্ট ক্রন্দিত বাঙালিদের অসহায় আর্তনাদকে দীর্ঘায়িত করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে
পরবর্তী নিবন্ধঅপেরা ও মায়াঞ্জেলোর কথোপকথন