পরকালের ভয় দেখিয়ে দুই শিশুকে নিপীড়ন

হেফজখানার শিক্ষকের আদালতে স্বীকারোক্তি ।। পৃথক ঘটনায় লোহাগাড়ায় একজন গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৮ মে, ২০২১ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

কোমলমতি শিশুদের ভয়ভীতি দেখান। এরপর করেন জোরপূর্বক যৌন নিপীড়ন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। গ্রেপ্তার হন পুলিশের হাতে। এরপর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। নগরীর পাহাড়তলীর আব্দুল আলী নগর এলাকার দারুস সুন্নাহ আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক আজিজুর রহমান আজিজ। তিনি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী এলাকার মৃত আব্দুস সালামের ছেলে। তিনি ওই মাদ্রাসার একটি কক্ষে থাকতেন।
আদালতসূত্র জানায়, মাদ্রাসা শিক্ষক আজিজুর রহমান আজিজ বৃহস্পতিবার (গতকাল) দুপুরের দিকে মহানগর হাকিম সরোয়ার জাহানের আদালতে দুই শিশুকে যৌন নিপীড়নের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, পরকালের ভয়ভীতি দেখিয়েই তিনি দুই শিশুকে যৌন নিপীড়ন করেন। এর মধ্যে এক শিশুকে ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময় তিনি হেফজখানায় নিজ শয়ন কক্ষে নিয়ে নিপীড়ন চালান।
থানা পুলিশ জানায়, দুই শিশুর একজনের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে গত বুধবার মাদ্রাসা থেকেই শিক্ষক আজিজুর রহমান আজিজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে দুই শিশুকে যৌন নিপীড়নের বিষয়টি তিনি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন। এরপর তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এদিকে থানায় লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, দুই শিশুর একজনের বয়স ১০ ও অপরজনের বয়স ১১ বছর। এর মধ্যে ১০ বছর বয়সী শিশুকে গত ৫ মে সকাল ১০টার দিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলায় অভিভাবকদের সাক্ষাতের রুমে নিয়ে জোরপূর্বক নিপীড়ন চালান। পরে শিক্ষক আজিজ ওই শিশুকে বলেন, ‘তুমি যদি কাউকে বল তাহলে জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে’। লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, ১১ বছর বয়সী অপর শিশু ২০১৯ সালে দারুস সুন্নাহ আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। পরবর্তীতে তাকে বিভিন্ন সময় মাদ্রসাসার তৃতীয় তলার পশ্চিম কোনে থাকা আসামির শয়ন কক্ষে (বর্তমানে ছাত্রদের পড়ার রুম নেজারা বিভাগ) ভয়ভীতি দেখিয়ে নিপীড়ন চালান। কাউকে কিছু না বলতে তাকেও ‘ইহকাল পরকালে শান্তি পাবে না’ মর্মে ভয়ভীতি দেখান।
পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান ইমাম আজাদীকে বলেন, দুই শিশুর মধ্যে ১০ বছর বয়সী শিশুর পিতা সাগরিকা গরুর বাজারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। শিশুকে হাফেজ বানাতে দারুস সুন্নাহ আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করান। সম্প্রতি ওই শিশুকে মন মরা অবস্থায় দেখে কী হয়েছে জানতে চাওয়া হয়। একপর্যায়ে শিশু ঘটনা খুলে বলে। এরই ধারাবাহিকতায় শিশুর পিতা থানায় এসে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যেখানে ১১ বছর বয়সী অপর এক শিশুর সাথে একই ব্যক্তির দ্বারা ঘটে যাওয়া নিপীড়নের ঘটনারও উল্লেখ করা হয়। একপর্যায়ে আমরা মামলাটি গ্রহণ করি এবং অভিযান চালিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক আজিজকে মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করি।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমদ আজাদীকে বলেন, পাহাড়তলী থানার একটি ধর্ষণ মামলায় মাদ্রাসা শিক্ষক আজিজুর রহমান আজিজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বিচারক ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা জবানবন্দি রেকর্ড করেন এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
লোহাগাড়ায় একজন গ্রেপ্তার : এদিকে লোহাগাড়ার বড়হাতিয়ায় ছাত্রকে নিপীড়নের অভিযোগে আবদুল্লাহ মোজাহিদ (২২) নামে হেফজখানার এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার রাত ১১টার দিকে ইউনিয়নের দুর্লভ পাড়া হেফজখানা ও এতিমখানা ভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আবদুল্লাহ মোজাহিদ ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও একই এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।
শিশুর নানা জানান, তার নয় বছর বয়সী নাতি ওই হেফজখানার ছাত্র। গত রমজান মাস থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার নাতিকে নিপীড়ন চালিয়ে আসছেন শিক্ষক মোজাহিদ। এতদিন সে কাউকে কিছু বলেনি। কিন্তু গত বুধবার সকালে বাড়িতে এসে কান্নাকাটি করে আর হেফজখানায় যাবে না বলে জানায়। তার মা এর কারণ জানতে চাইলে সে অনেক্ষণ পরে বিষয়টি খুলে বলে। পরে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়।
লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকের হোসাইন মাহমুদ জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি অবহিত করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (গতকাল) সকালে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাঁচদিন পর আবার মৃত্যুশূন্য দিন চট্টগ্রামে
পরবর্তী নিবন্ধঅস্বাভাবিক জোয়ারে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত