পতেঙ্গায় হবে পর্যটন জোন

বেসরকারী অপারেটর আপত্তি

| শনিবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

পতেঙ্গা সৈকত ঘিরে পর্যটন অঞ্চল গড়ে তুলতে বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ); তবে সৈকতের একাংশের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বেসরকারি অপারেটরের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আপত্তি আছে নানা মহলের। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর ইতোমধ্যে এ পর্যটন প্রকল্প বাস্তবায়নে সায় দিয়েছে। তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরু করে ২০২৪ সালের মধ্যে নতুন আঙ্গিকের এই পর্যটন অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্য ঠিক করেছে সিডিএ। মন্ত্রণালয়ের সায় মিললেও নগরীতে জনগণের জন্য উন্মুক্ত এই বিনোদন কেন্দ্রের একাংশ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে দেখছেন না অনেকে। তারা বলছেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় সৈকত ঘিরে আধুনিক পর্যটন সুবিধা গড়ে তোলা হোক। সিডিএ যে পরিকল্পনা করেছে, তাতে সৈকতের পতেঙ্গা অংশ থেকে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার অংশ নিয়ে হবে ‘পর্যটন জোন-১’। এর মধ্যে ৭০০ মিটার অংশ থাকবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। টেন্ডারের মাধ্যমে সেখানে অপারেটর নিয়োগ করা হবে। বাকি সোয়া পাঁচ কিলোমিটার সৈকত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে এর রক্ষণাবেক্ষণ করবে একই বেসরকারি অপারেটর প্রতিষ্ঠান। এছাড়া আকমল আলী রোড সংলগ্ন সৈকতের যে অংশটি সাগর থেকে ল্যান্ড রিক্লেইমের (জমি পুনরুদ্ধার) প্রক্রিয়ায় পাওয়া গেছে, সেখানকার ২৩ একর জমি নিয়ে হবে ‘পর্যটন জোন-২’।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, সৈকতে ময়লা-আবর্জনা জমে থাকে। কোনো চেইঞ্জরুম বা ওয়াশরুম নেই। তাই সুস্থ বিনোদনের জন্য পর্যটন জোন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র জোন-১ বেসরকারি অপারেটর পরিচালনা করবে। এটা হবে বঙ্গবন্ধু টানেল সংলগ্ন সৈকতের অংশে। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, বাকি পাঁচ কিলোমিটারের বেশি অংশ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এখন যেভাবে সবাই সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন, তখনও সেভাবেই করবেন। এর জন্য কোনো টিকেট লাগবে না। এই পুরো ৬ কিলোমিটার অংশের বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেসরকারি অপারেটর দেবে এবং সবার জন্য উন্মুক্ত সৈকতের অংশের রক্ষণাবেক্ষণও তারাই করবে বলে জানান কাজী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন, লাভের একটি অংশ তারা সিডিএকে দিবে। এভাবেই প্রস্তাব সাজানো হয়েছে। জোন-২ তে পর্যটকদের জন্য হোটেল-মোটেল-রাইডসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলার সুযোগ রাখা হয়েছে পরিকল্পনায়। কাজী হাসান বিন শামস বলেন, সাগর থেকে যে জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে পর্যটক আকর্ষণের জন্য যে ধরনের সুবিধা থাকা দরকার, তা করা হবে। সিডিএ নিজেও পর্যটন সংশ্লিষ্ট কিছু প্রকল্প করতে পারে। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সুযোগ পাবেন সেখানে। এছাড়া ওই এলাকা সংলগ্ন আউটার রিং রোডের বিপরীত পাশে (কান্ট্রি সাইড) ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতেও কেউ চাইলে হোটেল মোটেল করতে পারবেন। তবে সেখানে এখনকার মত ট্রাক-লরি টার্মিনাল থাকবে না। পুরো এলাকাটি আমরা পর্যকটদের জন্য বিভিন্ন আকর্ষণ দিয়ে সাজাতে চাই। সেখানে টয় ট্রেন চালুর পরিকল্পনাও আছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, এমনভাবে পুরো সৈকত সাজানো হবে, যাতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এর অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ। গত সপ্তাহে প্রকল্পের বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার কথা জানিয়ে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, এর আগে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে নৌবাহিনী, বন্দর, সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও রেলওয়েসহ সব সরকারি সংস্থা আমাদের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। সৈকত ঘিরে এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আইনজীবী আখতার কবীর চৌধুরী। তিনি বলছেন, চট্টগ্রাম নগরীতে প্রাকৃতিক স্থান ও বিনোদন কেন্দ্র বেসরকারি খাতে দেওয়ার ফল অতীতে ‘ভালো হয়নি’। যেমন সার্কিট হাউজের সামনে সবুজ চত্বরটি ধ্বংস করা হয়েছে। একইভাবে অন্য পার্কগুলোও নেই। ফয়স লেকেও একটা প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল। সেখানে যত্রতত্র ভবন করে নষ্ট করেছে। খরচ এত বেশি, সাধারণ মানুষ এখন সেখানে যেতে পারে না। পতেঙ্গা সৈকতটা অন্তত থাক, যেখানে সাধারণ এখনো মানুষ যেতে পারে। আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে এই সৈকত। সবকিছুর বাণিজ্যিকীকরণ হলে সাধারণ নাগরিকের উপকার হবে না। নামমাত্র ৫-১০ টাকা প্রবেশমূল্য নিয়ে, সৈকত রক্ষণাবেক্ষনের কাজটা সিডিএ নিজেরাই করতে পারে। বেসরকারি খাতে যেসব চুক্তি হয়, তা বৈষম্যমূলক। এতে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল লাভবান হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিপীড়ক অবস্থানে চলে গেছে। যারাই সম্পত্তিগুলোর দায়িত্ব থাকেন, তারা জমিদারি মনে করেন। এখান থেকে বের হতে না পারলে চট্টগ্রাম পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হবে। এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, জোন-১ এ টিকেটের মূল্য যাতে খুব কম রাখা হয় তা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত করা হবে। তাছাড়া বিদেশিদের জন্য হলেও তো একটি এঙক্লুসিভ জোন প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ যাতে কোনোভাবেই সুযোগ বঞ্চিত না হয়, তা বিবেচনায় রেখেই পুরো পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।
পতেঙ্গা সৈকতে বেসরকারি অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গতকাল শুক্রবার সৈকতে সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম জেলা বাসদ (মার্কসবাদী)।
জেলার সদস্য সচিব শফি উদ্দিন কবির আবিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে নেতারা পতেঙ্গা সৈকতকে নগরবাসীর একমাত্র উন্মুক্ত বিনোদন স্থান হিসেবে বর্ণনা করে এই জনগণের সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব রাষ্ট্রের কাছে রাখার দাবি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় গুলিবিদ্ধ সেই ইউপি সদস্য প্রার্থীই বিজয়ী