পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের দাবি তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ সচেতন মহল। ১৭৮ বছরের পুরোনো এ বিদ্যালয়টি দক্ষিণ চট্টগ্রামে বাংলা শিক্ষার আলোকবর্তিকা হিসেবে খ্যাত।
সোমবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান এ বি এম আবু নোমান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ১৮৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে বাংলা তথা ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
পটিয়ায় প্রথম ডিগ্রি কলেজ (বর্তমানে পটিয়া সরকারি কলেজ) প্রতিষ্ঠার পেছনেও এ বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ১৯৭৮ সালে সরকারি হওয়া এ কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য আড়াই একর জায়গা এ বিদ্যালয় থেকে দান করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ১৮৪৩ সালে পটিয়া স্কুলের মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু বক্তব্য দিয়েছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ১৯৭০ ও ৭৩ সালে দুবার এই মাঠে লক্ষাধিক লোকের জনসভায় বক্তব্য দেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ১৯৯৬ ও ২০১৮ সালের ২০ মার্চ এই মাঠে ভাষণ দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের শত শত ঐতিহাসিক কার্যক্রমে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূমিকা তুলে ধরা হয়। এই বিদ্যালয়ের সঙ্গে মধ্যযুগের পুঁথি গবেষক মুন্সি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, জে এম সেন হলের প্রতিষ্ঠাতা যাত্রা মোহন সেন, খ্যাতনামা লেখক অধ্যাপক ড. আহমদ শরীফ মনির, বাংলার মুসলমানদের মধ্যে গণিতে প্রথম ডক্টরেট আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গণিতবিদ ড. আতাউল হাকিম, আওয়ামী লীগের রাজনীতির দুঃসময়ের কাণ্ডারি আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুসহ অসংখ্য গুণী ব্যক্তিত্বের নাম জড়িয়ে আছে।
ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও এই বিদ্যালয়টি বিভিন্ন সরকারের আমলে অবহেলা, অবজ্ঞা ও বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হয়েছে। বিশেষত স্বাধীনতা-উত্তর বিগত ৪০ বছরে প্রশাসন থেকে কয়েকবার বিদ্যালয়টিকে সরকারিকরণের উদ্যোগ নেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। অথচ ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত আবদুর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে ১৯৮১ সালে সরকারি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পটিয়াতে হাইস্কুল জাতীয়করণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ই সবার আগে এর যোগ্য দাবিদার। গত ১০ বছরে শিক্ষার মান ও পরীক্ষার ফলাফলের দিক থেকেও অন্য হাইস্কুলগুলো থেকে এগিয়ে রয়েছে প্রাচীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা. সৈয়দ সাইফুল ইসলাম, স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান, বর্তমান প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমার বড়ুয়া, প্রাক্তন ছাত্র আবুল কাশেম, পটিয়া পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আলমগীর আলম, স্কুল পরিচালনা সদস্য আহমদ কবির, আরফ আলী, নজরুল ইসলাম বিপ্লব, শিক্ষক প্রতিনিধি চন্দন কান্তি নাথ, দেবাশীষ দাশ, নজরুল ইসলাম, অলক দাশ, ভগীরথ দাশ ও বিশ্বজিৎ দাশ প্রমুখ।