পঞ্চান্নতেও যৌবন যার

মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন | বৃহস্পতিবার , ১৮ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

১৮ই নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) দিবস। আজ থেকে দীর্ঘ পঞ্চান্ন বছর আগে এই দিনে ১৯৬৬ সালে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বাংলার প্রবেশদ্বার চট্টগ্রামে উচ্চ শিক্ষার মশাল নিয়ে প্রতিষ্ঠা পায় দেশের বৃহত্তম ও বর্তমানে বিশ্বের একমাত্র শাটলের ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ পঞ্চান্ন বছর পরেও যেন যৌবন ঠিকরে পড়ে চবির নিত্যনতুন যাত্রায়। দীর্ঘ এই পথচলায় বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজকের চবি৷ একুশশো একরের দেশের বৃহত্তম এই বিশ্বিবদ্যালয় ক্যাম্পাসের রয়েছে অপরূপ প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সমাহার। যে বিশ্ববিদ্যালয় আবিষ্কার করছে বহু সাহিত্যিক, গায়ক-গায়িকী, গবেষক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদ। রয়েছে শাটলের মতো অনন্য নিদর্শন। বর্তমানে ৮টি অনুষদের ৪৮টি বিভাগ, ৭টি ইনিস্টিটিউট, ৫টি গবেষণা কেন্দ্র ও ২২টি এফিলিয়েটেড কলেজে প্রায় ২৭,০০০ শিক্ষার্থীর পঠন-পাঠন চলমান। অতীত অধ্যায় উল্টালে বহু কীর্তি ও সফলতা অনুপ্রেরণা হয়ে ধরা দিবে সত্য, তারপরও প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছর শেষে রয়ে যায় বেশ কিছু আফসোস। শহর হতে ২২ কিলোমিটার উত্তরে হাটহাজারী উপজেলায় অবস্থিত বলে চবি ক্যাম্পাস যেন শহরের আলোতে বারবার উপেক্ষিত। যেভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সক্রিয় ভূমিকা থাকে দেশের প্রতিটা ক্ষেত্রে সেখানে অনেকটা নীরব ভূমিকার আসনে থাকে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীর ক্যাম্পাসটি। পঞ্চান্ন বছরেও সমাবর্তনের সংখ্যা চার-এ আটকে আছে। সমাবর্তন নিয়ে সাবেক-বর্তমান সকল ছাত্রছাত্রীর কণ্ঠেই হতাশার ছাপ। এদিকে শহরে থেকে বিশাল একটা দূরত্বে অবস্থান বলে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক অনেকটা ভাসা ভাসা। যেখানে একজন শিক্ষার্থীর জন্য ছাত্র-শিক্ষক মৈত্রী অপরিহার্য, সেখানে দেশের বৃহত্তম ও অন্যতম বিশ্বিবদ্যালয় হওয়া সত্বেও সৃষ্টিলগ্ন থেকে চবি ভুগছে টিএসসির মতো ছাত্র-শিক্ষক মিলনকেন্দ্রের অপূর্ণতার অনলে। আবার একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে মুক্ত চিন্তা আর স্বাধীন গণতন্ত্র চর্চা, গণতন্ত্রের মূল্যবোধ ও সুষ্ঠু গণতন্ত্র প্রক্রিয়া চর্চার অন্যতম স্থান, সেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন ছয় সংখ্যাতেই তালাবদ্ধ। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পর দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর পার হয়ে গেলেও অধরাই চাকসু নির্বাচন। যার সুযোগ নিয়ে সুযোগসন্ধানী আর সুবিধাভোগীরা চর্চা করছে নিজস্ব স্বার্থচর্চা। যেখানে নেই ছাত্র অধিকার রক্ষায় কোন প্রসংশনীয় ভূমিকা। নেই গবেষণার যথার্থ পরিবেশ। তাই চবি দিবসে একজন চবিয়ান হিসেবে চাই শীঘ্রই পূর্ণতা পাক অপূর্ণ এই ক্ষতসব। চিরযৌবনা প্রিয় ক্যাম্পাস আমার আলো ছড়িয়ে যাক আজীবন শতসহস্র শিক্ষার্থীর আলোকবর্তিকা হয়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসর্বত্র স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধকবি জিললুর রহমান কবিতার ভাবকেন্দ্রে পূর্ণকুম্ভ মৃদুল পুরুষ