পঁচিশে মার্চ বাঙালির ইতিহাসে শোকাবহ একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই রাতে বাংলার ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালি সৈন্য থেকে শুরু করে অগণিত নিরীহ, অসহায় মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি আধুনিক সেনাবাহিনি। হত্যা করেছিল হাজার হাজার মানুষকে। আজ এই নিষ্ঠুর গণহত্যার ৫১তম বার্ষিকী। গণহত্যা দিবস। এই ভয়াবহ গণহত্যা ১৯৭১ এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায় এবং বাঙালিরা দখলদারী পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতারিত করার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনির এই আক্রমণ ইতিহাসে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত। ১৯৭০ সালের পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকচক্র বাঙালির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার বদলে বেছে নেয় ষড়যন্ত্রের পথ। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পূর্ব নির্ধারিত জাতীয় অধিবেশন স্থগিত করলে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। এরই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের একটি সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা এবং রাও ফরমান আলীর পরিকল্পনায় এই গণহত্যা চালানো হয়। হালকা নীল রঙের অফিস প্যাডে কাঠ–পেন্সিল দিয়ে এই ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনাটি লেখা হয়েছিল। রাও ফরমান আলী নিজ হাতে তা লিখেছিলেন। পাঁচ পৃষ্ঠায় ষোলটি অনুচ্ছেদে বিভক্ত ছিল এই নীল নকশা। ১৮ মার্চ সকালে রাও ফরমান আলী এটি পাঠিয়ে দেন ঢাকা সেনানিবাসের জিওসির কাছে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ইপিআর এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনিতে থাকা বাঙালিদের কৌশলে নিরস্ত্র করে রাখা হয়েছিল। ট্যাংক, কামান সহ অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে উঠেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনি। যত্রতত্র অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট করে ধ্বংসপুরীতে পরিণত করেছিল তারা এ জনপদকে। কেবল ঢাকা শহরেই নিহত হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। যুদ্ধকালীন অবস্থা ছাড়া বেসামরিক জনগণের ওপর এমন নৃশংস হামলা, এমন গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।