এলএনজি গ্যাস বহনকারী বিশেষায়িত জাহাজে ব্যবহৃত পার্লাইট পাউডার পরিবেশের জন্য নয়া আপদ হয়ে উঠেছে। সীতাকুণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের আনা এলএনজি বহনকারী জাহাজগুলোর এই পাউডার খালে বিলে এবং উন্মুক্ত স্থানে ফেলা হচ্ছে। যা বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। এই পাউডারের ফলে শ্বাসকষ্ট এবং ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়ারও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, সীতাকুণ্ডের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে এলএনজি বহনকারী স্ক্র্যাপ জাহাজের আমদানি বেড়েছে। গত বছর দুয়েক ধরে এই ধরনের বেশ কিছু জাহাজ শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে কাটা হয়। বিশেষায়িত এসব জাহাজে ট্যাঙ্কগুলোকে সুরক্ষার জন্য ডাবল পার্ট প্লাইবোর্ডের প্রতিরোধক দেয়া থাকে। দুই পার্টের এই প্লাইবোর্ডের বিশেষ এক ধরণের পাউডার দেয়া থাকে। পার্লাইট পাউডার নামের এই পাউডার জাহাজের এলএনজি গ্যাসকে বাইরের তাপ এবং বাতাস থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। জাহাজ কাটার পর ট্যাংকের লোহার আস্তরের ভিতর থেকে এসব প্লাইউডের খাচার ভিতর থাকা পাউডারগুলো নানাভাবে বের হয়ে আসছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পাউডারগুলো উন্মুক্ত স্থানে ফেলে দিয়ে কাঠগুলো ফার্নিচার ব্যবসায়ী এবং লাকড়ি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। লাকডি এবং কাঠ ব্যবসায়ীরা প্লাইউড নিয়ে পাউডারগুলো উন্মুক্ত স্থানে ফেলছেন। খালে বিলে ফেলার ঘটনাও ঘটে।
সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় বিশাল এলাকায় উন্মোক্ত স্থানে অনেকগুলো পার্লাইড পাউডার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা অবস্থায় দেখা গেছে। বিশাল একটি পুকুরের মতো জায়গা ভরাট হয়ে গেছে শত শত টন পার্লাইড পাউডারে।
পার্লাইড পাউডারগুলো মোহাম্মদ মহিউদ্দিন নামের একজন লাকডি ব্যবসায় প্লাইউডের ভিতর থেকে বের করছিলেন। তিনি বলেন, আমরা কাঠগুলো বের করে লাকডি হিসেবে বিক্রি করে থাকি। পাউডারগুলো মাটিতে পুতে ফেলার নির্দেশনা রয়েছে বলেও তিনি স্বীকার করেন। পাউডারগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় আশে পাশের মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা বিষিয়ে উঠেছে। দরজা জানালা বন্ধ থাকলেও মিহি পাউডারগুলো ঘরের ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের বই খাতা থেকে শুরু করে খাবারের প্লেট পর্যন্ত সবকিছুতেই সাদা পাউডারগুলো পড়ে। পাউডারগুলো মুখ দিয়ে শরীরের প্রবেশ করলে হাসি কাশিও বেড়ে যায়। এতে অনেকেরই শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, এগুলো সাদা, আল্ট্রা-লাইটওয়েটের একটি পাউডার। যা খুব সূক্ষ্ম গুঁড়ো থেকে শুরু করে একটি কণা আকারে ৬ মিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটি খুব মিহি হওয়ার কারণে যে কোন স্থানে অনায়াসে উড়ে পড়তে পারে। হালকা বাতাসেও এই পাউডার উড়তে থাকে। ফলে পাউডারগুলো স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলার নির্দেশনা রয়েছে। এই ধরনের বর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে ফেলার কোন সুযোগ নেই। শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় এই ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
চিকিৎসক ডা. আহসান ফুয়াদ অয়ন বলেন, এই ধরনের পাউডার মানুষের ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদী সংকট তৈরি করবে। ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ হওয়ারও আশংকা রয়েছে।
একাধিক শিপ ব্রেকিং ব্যবসায়ী বলেছেন, পাউডারগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হবে এই শর্তেই কাঠগুলো ব্যবসায়ীদের দিয়ে থাকি। কিন্তু তা যদি তা না করে তাহলে অন্যায় করছে। বিষয়টি প্রশাসনকে দেখার জন্যও তারা অনুরোধ করেছেন।