নো-ফ্লাই জোন কেন নয়

করলে সেটা হবে ন্যাটোর যুদ্ধে যোগদান : পুতিন ।। রাশিয়া যুদ্ধ বিরতি মানছে না : ইউক্রেন

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ৬ মার্চ, ২০২২ at ৮:০০ পূর্বাহ্ণ

যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনকে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করতে ন্যাটোর কাছে আহ্বান জানিয়ে আসছিল দেশটি, কিন্তু জোটটি তা না করায় ব্যাপক চটেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনকে বরাবরই সমর্থন দিয়ে আসলেও কেন এ প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করছে ন্যাটো, তা বিশ্লেষণ করে সিএনএন বলেছে, রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানো এড়াতেই যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটটির এই সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ার করেছেন এই বলে যে ইউক্রেনের আকাশ সীমায় কোনো দেশ বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করলে তা হবে এই যুদ্ধে যোগদানের সামিল। রুশ টিভিতে বক্তব্য রাখার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন। কোনো দেশ এই লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিলে সেটা এই সশস্ত্র সংঘাতে যোগদান বলে বিবেচনা করা হবে, তিনি বলেন।
নো-ফ্লাই জোন কী : নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় যে কোনো উড়োজাহাজ ওড়া বন্ধ করা যায়। ইউক্রেনে নো ফ্লাই জোন ঘোষণার মানে দাঁড়াবে, সেখানে রাশিয়ার উড়োজাহাজ উড়তে পারবে না। অর্থাৎ রাশিয়া বিমান হামলা চালাতে গেলেও তাদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে। ন্যাটোভুক্ত দেশ নয়, এমন এলাকায় আগেও নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাটো। যেমন লিবিয়া ও বসনিয়া। তবে এই ধরনের পদক্ষেপ বরাবরই বিতর্কের মুখে পড়ে। কেননা, এই পদক্ষেপ সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার মতোই।
নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করলে কী হবে : নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করলে তা কার্যকর করতে হয় সামরিক শক্তি দিয়ে, সমস্যাটা এখানেই। এখন যদি রাশিয়া নো ফ্লাই জোনে ঢুকে পড়ে, তাহলে ন্যাটোকেও তা ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এমন ক্ষেত্রে বিমান ভূপাতিত করার দিকে যেতে হবে ন্যাটোকে। আর সেটা যদি ঘটে, তাহলে রাশিয়ার দিক থেকে ন্যাটোর সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার দাবি তোলা হবে, তাতে সংঘাত আরও বিস্তৃত হবে।
ন্যাটো কেন করছে না : যুদ্ধরত রাশিয়া কিংবা ইউক্রেন দুই দেশের একটিও ন্যাটোর সদস্য নয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ন্যাটোকে তার জন্য হুমকি মনে করছেন। শুধু তাই নয়, ইউক্রেনে আগ্রাসনের সমর্থনে তিনি ন্যাটোর সম্প্রসারণকে ঢাল হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। ফলে এই পরিস্থিতিতে ন্যাটো সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার দায় নিতে একেবারেই চাইছে না। যেখানে যুদ্ধ করতে হবে পরমাণু বোমা আছে, এমন আরেকটি দেশের বিরুদ্ধে। তাই এখন বাইরে থেকে ইউক্রেনের প্রতিরোধ যুদ্ধকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার অভিযানের নিন্দা জানাচ্ছে। দৃশ্যত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে ঝুঁকি তৈরি করবে, এমন যুদ্ধের পথ খুলতে চায় না ন্যাটো।
ভেস্তে গেছে যুদ্ধবিরতি : এদিকে ইউক্রেনের মারিউপোল শহর থেকে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে এক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাশিয়া রাজি হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তারা আবার শহরটির ওপর অব্যাহত গোলা হামলা চালাচ্ছে। ফলে এই পরিকল্পনা এখন ভেস্তে গেছে। ‘আমি এখন মারিউপোলে, শহরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। আমি তিন থেকে পাঁচ মিনিট পরপর গোলার শব্দ শুনতে পাচ্ছি,’ বলছিলেন শহরের একজন বাসিন্দা, ৪৪-বছর বয়সী আলেঙান্ডার। তিনি জানান, শহরের লোকজনকে বের করে নেয়ার জন্য যে নিরাপদ করিডোর স্থাপন করা হয়েছে, তা কাজ করছে না। আমি দেখছি যারা পালানোর চেষ্টা করেছিল তারা ফিরে আসছে। একেবারেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। মারিউপোলের পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ঐ শহর থেকে বেসামরিক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তারা বলছে, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করা হলেও রুশ পক্ষ তা পালন করছে না। বাসিন্দাদের বলা হয়েছে শহরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে এবং নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিতে। গতরাতে ডেপুটি মেয়র বিবিসিকে জানিয়েছেন, মারিউপোলের ওপর এখনও রুশ গোলাবর্ষণ চলছে। বেসামরিক লোকজনকে যে পথ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে তার শেষভাগে এখনও লড়াই চলছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে ইউক্রেনে রুশ দখলদারিত্বে থাকা খেরসন শহরের বাসিন্দারা দখলকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে সরব বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। শহরের কেন্দ্রস্থলে জমায়েত হয়ে তারা স্লোগান দিচ্ছেন এবং নানা ভাবে রুশ সৈন্যদের গালাগালি করছেন। সোশাল মিডিয়ার অন্য কিছু ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে রুশ সৈন্যরা ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করছে। কৃষ্ণ সাগর এবং দিনেপার নদীর তীরে খেরসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর।
অ্যারোফ্লটের ফ্লাইট বাতিল করলো রাশিয়া : রাশিয়ার জাতীয় বিমান সংস্থা অ্যারোফ্লট আগামী ৮ই মার্চ থেকে প্রায় সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করেছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে, ফ্লাইট পরিচালনায় তারা অতিরিক্ত বাধার মুখোমুখি হচ্ছে। তবে সংস্থাটি বলছে, একমাত্র প্রতিবেশী দেশ বেলারুশ এবং অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলো চলবে। ব্রিটেন, ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে তাদের আকাশ সীমায় অ্যারোফ্লটের বিমান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর ফলে সংস্থাটির জন্য বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী বহন কঠিন হয়ে পড়েছে। রাশিয়াও এর বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে।
রাশিয়ার সমর্থনে মিছিল সার্বিয়ায় : এতদিন খবর ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু গতরাতে সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে রুশপন্থী এক মিছিল হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাজ্যকে রাশিয়ার হুমকি
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা