প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টেলিভিশন ও জাতীয় দৈনিকে নানারকম ভয়াবহ নেতিবাচক খবর দেখে মন খারাপ হয়ে যায়। খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন ও আঘাতের খবর এ মাধ্যমগুলো ভরা থাকে। আজকাল নিজেদের প্রাপ্তির জন্য আমরা সবাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে কাজ করছি। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। দেশ আর সমাজকে নিয়ে কি ভাবছি আমরা? সমাজের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে কী চাইব? সবাই নিজেকে নিয়েই শুধু ব্যস্ত রয়েছি, শুধু ভাবছি নিজেকে নিয়ে। আমরা যারা সাধারণ জনগণ তাদের কী হবে? আমাদের নিয়ে কেউ কি ভাবছেন? এটা কিন্তু মোটেই দৃশ্যমান নয়। আমরা কেমন জানি একটা বেড়াজালের মধ্যেই আছি। জাতি হিসেবে কি আমরা খুব একটা এগোতে পারছি? খুব একটা এগোচ্ছি বলে মনে হয় না, অবশ্যই কিছু ভালো অর্জন আমাদের আছে। সেগুলোও নষ্ট হয়ে যায় কাদা ছোড়াছুড়িতে, তাছাড়া সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় তো রয়েছেই, এই নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে আমাদের সব অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের অর্জনকে ধরে রাখতে পারছি না। সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে প্রকৃত মেধাবীর সংখ্যা আমাদের সমাজে ক্রমেই কমে আসছে। সামাজিক অবক্ষয়ের পাল্লা ভারী হচ্ছে। আমাদের নতুন প্রজন্ম, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম আছে, আমরা কি তাদের কথা ভাবি? তারাই ভবিষ্যতের হাল ধরবে, তাদেরকে সেভাবেই তৈরি করতে হবে আমাদের। প্রতিটি বাবা–মা কি তাদের সন্তানের খোঁজখবর রাখেন? সন্তানকে কীভাবে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে কি ভাবেন? সন্তানের বাবা–মা ব্যস্ত রয়েছেন জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর জন্য, দিনরাত পরিশ্রম করে আনা অর্থ কোনো কাজে লাগছে কি না সে বিষয়ে কারও চিন্তা করার সময় নেই। সন্তান কী শিখছে, কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, সে খেয়াল রাখার মতো অবস্থায় আমরা নেই। কিন্তু কেন, এমন তো হওয়ার কথা ছিল না! কেন এমন হলো তা নিয়ে সরকার ও নাগরিক সমাজকে ভাবতে হবে। সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এগুলো থেকে বের হয়ে আসা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমরা শুধু টাকার পেছনে দৌড়াচ্ছি। টাকার জন্য মানসম্মান, আত্মসম্মানবোধ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত আছি! অপরদিকে সমাজ বিনির্মাণে, রাষ্ট্রের একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারে আমাদের যে কিছু দায়িত্ব রয়েছে, সেগুলো আমরা সঠিকভাবে পালন করছি কি না, কিংবা বেমালুম ভুলে যাচ্ছি কি না, সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে। আসুন, জাতি হিসেবে আমাদের সকল সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় রোধ করে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমাদের সুকুমার বৃত্তিগুলোকে কাজে লাগিয়ে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ ও অসংখ্য মা–বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশকে এক সুন্দর বাংলাদেশে পরিণত করি।