নীতিবাক্য বলা এবং তা পালন করার মধ্যে বিস্তর তফাৎ রয়েছে। আমাদের দেশে নীতিবাক্য বলা তথা নৈতিকতা শিক্ষা দেয়ার মানুষগুলোর মধ্যে অনেককেই ইদানীং অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে দেখা যায়, যা রীতিমতো দেশ ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণার সামিল। কারণ প্রকৃত ভালো মানুষের লক্ষণ হলো যা তিনি অন্তরে বিশ্বাস করেন তা-ই তিনি মুখে প্রকাশ করেন। বর্তমান যুগের প্রায় লোককেই দেখা যায়, সামান্য সুযোগ পেলে নিজেকে অন্যদের তুলনায় ‘সেরা নীতিবান ব্যক্তিত্ব’ প্রমাণের চেষ্টা করেন। অর্থাৎ তিনিই ‘প্রকৃত ভালো মানুষ’। অথচ এমন সুন্দর সুন্দর পরামর্শদাতাদের মধ্যে অনেকেই সুযোগ পেলে নিজ স্বার্থ রক্ষায় অন্যায় কাজে লিপ্ত হতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেন না। অসহায়কে সহায়তা করার জন্য প্রকাশ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া অনেক দায়িত্বশীলকে সমাজের এমন অসহায়দের খাদ্য সামগ্রী বা অর্থ লুটপাটের মতো ঘৃণিত কাজের খবর প্রিন্ট মিডিয়ার কল্যাণে নিয়মিত আমাদের নজরে আসে। সমাজ হতে অত্যন্ত নোংরা অনৈতিক কাজ দূরীকরণে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বসে যারা শাস্তির ভয়াবহ রূপ তুলে ধরেন তাদের মধ্যে অনেকেই আবার সুযোগ পেলে এমন ঘৃণিত কাজে মশগুল হন। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, যিনি ক্লাশরুমে এদেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার তথা শিক্ষার্থীদেরকে নৈতিকতার শিক্ষা দেন সেই শিক্ষকদেরও অনেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিভিন্ন ফন্দির মাধ্যমে তছরূপ করেন বা ছাত্রীকে বিভিন্ন ভয়ভীতি বা লোভ দেখিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব পালনে বাধ্য করেন, আর প্রস্তাবে সায় না পেলে ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার পরে দেশের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিগণের বিরুদ্ধে তদন্তে এমন অনেক কিছু প্রকাশ পায় যা শুনলে নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, নিজ দলের লোকদের মনেও ঘৃণার জন্ম হয়, অন্তর হতে মন্দ কথা বেরিয়ে আসে। এমন অসৎ ব্যক্তিদের কারণে জনগণ কষ্ট পাওয়ার পাশাপাশি দেশ ও জাতি অনেকাংশে পিছিয়ে যাচ্ছে। এদের কারণে অনেক ন্যায়পরায়ন সৎ মানুষদেরও যাচাই না করে আমরা সন্দেহের চোখে দেখছি। ফলে তাঁরা নিজের মান সম্মান রক্ষার জন্য ভালো কাজ করা হতে বিরত থাকাও পরিলক্ষিত হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী আইনকে প্রয়োগ করা তথা কোনো প্রকার দুর্নীতির আশ্রয় না দিলে এমন নৈতিকতার অবক্ষয় হতে অনেকাংশে সরে আসা সম্ভব হবে।