মনোজ বসু (১৯০১–১৯৮৭)। কথাসাহিত্যিক। মনোজ বসুর জন্ম ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ শে জুলাই বৃটিশ যশোর জেলার কেশবপুর থানার ডোঙ্গাঘাট গ্রামে। কলকাতার আশুতোষ কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে। কলকাতার ভবানীপুরে সাউথ সুবারবন স্কুলে শিক্ষকতা নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন এবং দীর্ঘদিন এখানে শিক্ষকতার পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তক রচনায় মনোনিবেশ করেন। প্রকাশনার জন্য পরবর্তীতে নিজের প্রকাশনা সংস্থা ‘বেঙ্গল পাবলিশার্স’ প্রতিষ্ঠা করেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি কাব্যচর্চার মাধ্যমে তিনি সাহিত্যে প্রবেশ করেন। পত্রিকায় প্রকাশিত তার লেখা প্রথম গল্প ছিল ‘গৃহহারা’। তার গল্পের সংকলন ‘বনমর্মর‘ ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। গুরুসদয় দত্ত প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলার শক্তি‘(১৯৩৬) মাসিক পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। প্রকাশনা ও সম্পাদনা কাজের পাশাপাশি তিনি নিজে উপন্যাস রচনায়ও হাত দেন। সেসময়ের সশস্ত্র বিপ্লবীদের ব্যক্তিজীবন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে রচনা করেন সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘ভুলি নাই’। মনোজ বসুর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো, উপন্যাস: ভুলি নাই, সৈনিক, জলজঙ্গল, বৃষ্টি বৃষ্টি, আমার ফাঁসি, রক্তের বদলে রক্ত, মানুষ গড়ার কারিগর, রূপবতী, বন কেটে বসত, নিশিকুটুম্ব, পথ কে দেখাবে। গল্পগ্রন্থ: বনমর্মর, নববাঁধ, দেবী কিশোরী, পৃথিবী কাদের, একদা নিশীথ কালে। নাটকঃ প্লাবন, নতুন প্রভাত, রাখিবন্ধন ও শেষলয়। মনোজ বসু ভারতীয় সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। ভ্রমণের বিচিত্র অভিজ্ঞতায় তাঁর লিখিত ‘ভ্রমণ কাহিনীঃ , ‘চীন দেখে এলাম’, ‘সোভিয়েতের দেশে দেশে’, ‘নতুন ইউরোপ নতুন মানুষ’, ‘পথচলি’ বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ হিন্দি, ইংরেজি, গুজরাটি, মারাঠা, মালয়ালাম ভাষায় মুদ্রিত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি গ্রন্থ চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। সাহিত্যকীর্তির জন্য স্বীকৃতি ও পুরস্কার লাভ করেছেন। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিখ্যাত ‘নিশিকুটুম্ব’ উপন্যাসটির জন্য ভারতের সাহিত্য সম্মাননা–সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহ পুরস্কারে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শরৎচন্দ্র পদক ও পুরস্কারে’ সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৮৭ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।