নিষিদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় যা বলল জামায়াত

| শুক্রবার , ২ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ হওয়ার পর সরকারের বিরুদ্ধে ‘সংবিধান লঙ্ঘনের’ অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী। ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী জামায়াত এবং এর সকল অঙ্গ সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। খবর বিডিনিউজের।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। আমরা সরকারের এই অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ‘ভিন্নখাতে’ প্রবাহিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সরকার ছাত্রদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য দেশে দলীয় ক্যাডার ও রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গণহত্যা চালায়। সরকারের এই গণহত্যার বিরুদ্ধে দেশের শিক্ষকসমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে।

বিশ্ব সম্প্রদায় এই গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে। সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নির্বাহী আদেশবলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে।’

সরকারের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্বনাম জামায়াতইসলামী/জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) এবং এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে (পূর্বনাম ইসলামী ছাত্রসংঘ) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।’

পাশাপাশি হাই কোর্ট এক রিট মামলার রায়ে রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও তা বহাল রেখেছে। নিষিদ্ধ ঘোষণা হলেও জামায়াত গোপন দলের মত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। শফিকুর রহমানের বিবৃতিতে সেই ইংগিতই মিলছে।

তিনি বলেন, ‘সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেই জামায়াতে ইসলামীর মূল কাজ ইসলামের দাওয়াত, মানুষের চরিত্র সংশোধন ও ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজ কখনো বন্ধ হবে না। আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সকল স্তরের জনশক্তিকে ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার আহ্বান জানাচ্ছি।

সরকার দেশে গণহত্যা চালিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের উপর দোষ চাপানোর যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। তদ্‌রূপ সরকার বিভিন্ন অঘটন ঘটিয়ে জামায়াতের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চালাতে পারে। এই ব্যাপারে দেশবাসী সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’

জামায়াতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও নৈরাজ্যবাদের ‘কোনো সম্পর্ক নেই’ দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে ভূমিকা পালন করেছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় জামায়াতের ছয়জন নেতাকে জঙ্গিদের বোমা হামলায় প্রাণ হারাতে হয়েছে।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা জামায়াতকে ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহারের’ কারণে। পরে জিয়াউর রহমানের আমলে তারা রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পায়। দলটির বর্তমান আমির বলছেন, ‘বর্তমান সরকারসহ কারো আঘাতেই ইসলামী আন্দোলন স্তব্ধ হবে না, ইনশাআল্লাহ।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধসহিংসতা দমনের সক্ষমতা অবশ্যই আছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধময়লার স্তূপে চাপা পড়ে চসিক কর্মী নিহত