নিরপেক্ষ সরকার না হলে নির্বাচনে যাব না : ফখরুল

| রবিবার , ৩ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় নির্বাচনের এখনও দুই বছর বাকি থাকলেও তা নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরের চাপান-উতর জমে উঠেছে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন। তার জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, তাহলে তারা নির্বাচনেই যাবেন না। খবর বিডিনিউজের। গতকাল শনিবার এক আলোচনা সভায় ফখরুল বলেন, আমাদের কথা খুব পরিষ্কার, নির্বাচন নির্বাচন খেলা আর হবে না। নির্বাচন হতে হলে অবশ্যই একটি নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, নির্বাচন হতে হলে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন হতে হবে। শেষ কথা আমরা কোনো নির্বাচন মেনে নেব না যদি নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার না থাকে এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সেই নির্বাচন না হয়।
সংবিধান সংশোধনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল হওয়ার পর ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। ফলে একতরফা ভোটে ক্ষমতায় থেকে যায় আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালের নির্বাচন একই পদ্ধতিতে হলেও তাতে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। তবে ভোট শেষে কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করে দলটি।

এবার সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আপনাদের (সরকার) দিন ঘনিয়ে এসেছে, দিন শেষ। মানে মানে নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তৈরি করে সরে যান এবং জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে দিন। দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আজকে সুশৃক্সখল হোন, শুধু পদের জন্য দৌড়াবেন না। নতুন কমিটি হচ্ছে তার জন্য মাঠ বোঝাই করে দেবেন না। মাঠ বোঝাই করবেন যখন আন্দোলনের ডাক আসবে, মাঠ বোঝাই করবেন যখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা মাঠে নামব, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য যখন আমরা মাঠে নামব। গণআন্দোলন ছাড়া, গণঅভ্যুত্থান ছাড়া এই দানবকে সরানো যাবে না।
আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল। তিনি বলেন, তারা জানে, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তারা ৩০টা আসন পাবে না। এই কারণে তারা কী করেছে? সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা দলীয়করণ করেছে। ভোটের অধিকারটা কেড়ে নিয়েছে। ‘আজকে আওয়ামী লীগ এখন আবার চেষ্টা করছে আবার তারা ক্ষমতায় আসবে ওই ধরনের একটা নির্বাচন করে। যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না। তারা ইভিএম চালু করেছে। এই যন্ত্র একটা বড় হাতিয়ার, কী করে ভোট চুরি করা যায়।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধবংস করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ফখরুল। ‘কয়েকদিন আগে তিনি রাশিয়াতে গিয়ে নির্বাচন পদ্ধতি দেখে এসেছেন। রাশিয়ার একই অবস্থা। যে থাকে সরকারে হয় সে একবার প্রেসিডেন্ট হয় না হয় প্রধানমন্ত্রী হন। বাংলাদেশের সঙ্গে তার কোনো পার্থক্য নাই। ওটা দেখে এসেছেন উনি দিনের বেলা কিভাবে ভোট চুরি করা যায়, সেটা শিখে এসেছেন।
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ আইনসহ বিভিন্ন ভয়ংকর সব আইন করে জনগণের কথা বলার অধিকারকে সরকার পায়ের তলায় দাবিয়ে রেখেছে বলেও দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে ‘১ অক্টোবর ২০০১ : নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সর্বশেষ নির্বাচন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলে তারা সংবিধানবিরোধী কথা বলে। এই সংবিধানকে শেষ করে দিয়েছে কাটা-ছেঁড়া এই সরকার। তারা আবার লম্বা লম্বা কথা বলে! আমাদের এখন একটাই কথা, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদেরকে প্রেসক্লাবে জায়গা দেবেন না, আমাদেরকে ফুটপাতে জায়গা দেবেন না। আমাদের সভা-সমাবেশ করতে দেবেন না। এটা হবে না।
মির্জা আব্বাস বলেন, সব মানুষের মুখে একটা আওয়াজ- আওয়ামী লীগ বোধহয় গেলো, বিএনপি বোধহয় আসছে। আওয়ামী লীগের পতন আমাদের ঘটাতেই হবে, যেভাবে হোক।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সাইফুল আলম নিরব, আবদুল কাদির ভূঁইয়া, হেলেন জেরিন খান, ফজলুর রহমান খোকন বক্তব্য রাখেন। অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুমও বক্তব্য রাখেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৮ মাস পর চালু হচ্ছে চবির শাটল ট্রেন চলবে ১৬ অক্টোবর থেকে
পরবর্তী নিবন্ধসেই অস্ত্রাগার হচ্ছে জাদুঘর চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের স্মৃতি