নিখোঁজ বিএনপি নেতার বাসা থেকে তড়িঘড়ি ফিরলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত

| বৃহস্পতিবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন ও ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’র সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম আঁখির বাসায় গিয়ে আরেকটি সংগঠনের নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। গতকাল বুধবার সকালে তেজগাঁওয়ের শাহীনবাগের ওই বাড়িতে রাষ্ট্রদূত গেলে সেখানে তাকে ঘিরে ধরে স্মারকলিপি হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন ‘মায়ের কান্না’ নামের আরেকটি সংগঠনের কর্মীরা। তখন তড়িঘড়ি করে পিটার হাস গাড়িতে করে ওই স্থান ত্যাগ করেন। খবর বিডিনিউজের।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আমলে হত্যাকাণ্ডের শিকার সামরিক বাহিনীর সদস্যদের স্বজনদের সংগঠন এই ‘মায়ের কান্না’। বুধবারের এ ঘটনার বিষয়ে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ঠিক সময়ের আগেই বৈঠক শেষ করেছেন রাষ্ট্রদূত। আমরা বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে ধরেছি। এ ঘটনার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রদূতকে সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার সকাল ৯টার দিকে শাহীনবাগের ওই বাড়িতে যাওয়ার আগে থেকেই ‘মায়ের কান্না’র সংগঠকরা সেখানে জড়ো হন। বাড়ির ভেতরে সুমনের পরিবারের সঙ্গে আধা ঘণ্টার বেশি আলোচনার পর বেরিয়ে আসেন তিনি। বের হয়ে গাড়িতে ওঠার সময় তাকে ঘিরে ধরে স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করে ‘মায়ের কান্না’ এর সদস্যরা। স্মারকলিপিতে জিয়ার আমলে ফাঁসি হওয়া সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের হত্যার ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়ার বিষয় তুলে ধরেন তারা। রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা দলের সদস্যের সঙ্গে ঠেলাঠেলির মধ্যে গাড়িতে উঠে চলে যান রাষ্ট্রদূত।

এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন তিনি। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে বিকালে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আজকে হঠাৎ করে মাননীয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত জরুরিভিত্তিতে আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ করে উনি বললেন যে, উনি এক বাসায় গিয়েছিলেন, সেখানে যখন গেছেন তখন অনেক লোক সেখানে ছিল। উনি গিয়েছিলেন একটি বাসায় কিন্তু বাইরে বহু লোক ছিল। এবং তারা উনাকে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে এবং উনার সিকিউরিটির লোকেরা উনাকে বলেছে যে, আপনি তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যান। কারণ ওরা আপনার গাড়ি ব্লক করে দেবে। সেই নিরাপত্তা অনিশ্চয়তাতে তিনি তখন তাড়াতাড়ি চলে গেছেন। এবং এতে তিনি খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন।

নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকার নেবে, এমন আশ্বাস রাষ্ট্রদূতকে দেওয়ার কথা জানিয়ে মোমেন বলেন, আমি উনাকে বললাম যে, ‘আপনার নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব আমাদের। আপনার ওপর কিংবা আপনার লোকের ওপর কেউ আক্রমণ করেছে? উনি বললেন যে ‘না’। উনি বললেন যে, ‘উনার গাড়িতে হয়ত দাগ লেগেছে, তবে ওটা শিউর না’। আমি বললাম, আপনি এবং আপনার লোকজনকে আমরা নিরাপত্তা দেব। আপনি আরও অধিকতর নিরাপত্তা চান আমরা দেব। তবে আপনি ওখানে গেছেন এই খবরটা কে প্রকাশ-প্রচার করল? আমরা তো জানি না। আমরা, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছুই জানি না, আপনি আমাদের জানান নাই। সো উই ডোন্ট নো এনিথিং এবাউট।

এ নিয়ে রাষ্ট্রদূতের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই তথ্যটা, এই যে যাবেন আপনি লিক করলো কে? ওইটা উনি উত্তর দিতে পারেননি। তো আমরা এটাই বলেছি, আপনার নিরাপত্তা আমরা দেব। আর আপনি ওখানে যাচ্ছেন এটা কেমন করে লোকের কাছে প্রচার হলো, আপনার লোকই তো করতে পারে, এইটা আমরা বলেছি। তিনি একটু দুশ্চিন্তায় আছেন। ‘সোচ্চার থাকার কারণে’ সংবাদ মাধ্যম সেখানে গিয়েছে, এমন অবস্থান রাষ্ট্রদূতকে জানানোর কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি বললাম যে দেখেন আমি মিডিয়াকে আটকাতে পারব না। আমাদের দেশের মিডিয়া খুব সোচ্চার। আপনারা যদিও বলেন ওদের ফ্রিডম অব স্পিচ নেই, আমাদের মিডিয়া খুব সোচ্চার।

যখনই হয় তারা এটার পেছনে লেগে থাকে। আমি তাদের দূরে রাখতে পারি। আপনি যদি চান ১০ ফিট, ১৫ ফিট দূরে রাখতে পারি, আমি সেটা পারব। কিন্তু আমি তাদের কোথাও বাধা দিতে পারব না। আর ওখানে লোকজন গেছে, সে লোকজনকেও আমি বাধা দিতে পারব না। অনলি যেটা করব, আপনার প্রটেকশনের জন্য ওদের দূরে রাখব। ইট ইজ এ কান্ট্রি অব ফ্রি স্পিচ, তারা তাদের বক্তব্য দেবে। তাদের মবিলিটি করবে আমি তাকে অ্যারেস্ট করতে পারব না।

কেউ যদি আক্রমণ করে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমন আশ্বাস রাষ্ট্রদূতকে দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আপনার ওপরে যদি কোনো আক্রমণ হয়ে থাকে কিংবা আপনার লোকের ওপরে কেউ যদি আক্রমণ করে কিংবা অ্যাসল্ট করে তাহলে নিশ্চয়ই পাবলিক প্রোপারটি, প্রাইভেট প্রোপার্টি যদি কেউ ধ্বংস করে আমি তাকে গ্রেপ্তার করতে পারব। আদারওয়াইজ আমি কিছু করতে পারব না। তবে আপনার প্রোটেকশন আমরা অবশ্যই দেব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনূর্ধ্ব-১৪ ক্রিকেটারদের জ্ঞাতার্থে
পরবর্তী নিবন্ধআগামী বাজেট অধিবেশনের আগে ভূমি সংক্রান্ত তিনটি আইনের খসড়া সংসদে পাঠানো হবে : ভূমিমন্ত্রী