সংবাদপত্র ও প্রকাশনার কাজে ব্যবহৃত বিশেষ কাগজ নিউজপ্রিন্ট নিয়ে দেশে একটি ‘সিন্ডিকেট’ তৈরি হওয়ার কথা জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি এও জানিয়েছেন, সিন্ডিকেটটি ভাঙতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেছেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের (বিএসপি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে নিউজপ্রিন্ট ব্যবসার একটা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। এটা ভাঙতে হবে। এই সিন্ডিকেট দাম বাড়ায় কমায়। এদের কারণেই সরকারের কয়েক দফা উদ্যোগের পরও খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল চালু করা সম্ভবপর হয়নি। আগে যখন বাংলাদেশে উৎপাদিত নিউজপ্রিন্ট দিয়ে পত্রিকা ছাপানো হতো তখন বিজ্ঞাপন বাদে শুধু পত্রিকা বিক্রির অর্থ দিয়েই মোটামুটিভাবে পত্রিকা চালানো যেতো। এ ব্যাপারে সবারই সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
বৈঠকের শুরুতে বিএসপি সাধারণ সম্পাদক জি এম কিবরিয়া বলেন, ‘কাগজ, কালি, মুদ্রণশিল্পসহ সব জিনিসপত্রের দাম শতভাগ বেড়েছে। কিন্তু সরকারি বিজ্ঞাপনের দাম আগের মতই রাখা রয়েছে। ডিএফপির মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের মূল্য পুনর্নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি। সারা দেশে বিজ্ঞাপন কেন্দ্রীয়করণ না হওয়ার কারণে (অনেকেই) মাসে বা সপ্তাহে একবার পত্রিকা বের করে সরকারি সকল বিজ্ঞাপন ছাপে। এটি রীতিমত ফৌজদারি অপরাধ। (এ বিষয়ে) আপনার এখান থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে দিলে, আমরা সবাই সেটি ছাপাব।’ তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিতরণ করা ২০২০–২১ ও ২০২১–২২ অর্থবছরের ক্রোড়পত্রের বিল এখনও পরিশোধ করা হয়নি জানিয়ে সব সরকারি বিজ্ঞাপন কেন্দ্রীয়ভাবে সংবাদমাধ্যমে বণ্টনের দাবি জানান কিবরিয়া।
বিএসপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষিতে কাগজের দাম এত বেশি যে– আমি বাণিজ্যমন্ত্রীরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তাকে (বাণিজ্যমন্ত্রী) বলেছি, ডলার সংকটের কারণে কাগজ আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ দেশে যে কাগজ উৎপাদিত হয়, যেটির দাম ছিল ৭০০ টাকা, এখন তার দাম ২২০০ টাকা হয়েছে। দাম বাড়তে পারে, কিন্তু একটা যৌক্তিক কারণ থাকতে হবে।’ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য বলেন, ‘প্রেসের প্লেট, কালিসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। রেটগুলো যদি পুনঃবিবেচনা করেন– তাহলে সংবাদপত্রগুলো শুধু উপকৃত হবে না, তাদের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।’
কোভিড মহামারীর রেশ না কাটতেই রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সংকট তৈরি হয়। বাংলাদেশের অনেক সংবাদপত্র বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি করে পত্রিকা ছাপলেও এলসি খুলতে না পারায় কাগজ আমদানির পথ বন্ধ হয়ে যায়।
হাছান মাহমুদ জানান, বিজ্ঞাপনের বকেয়া বিল পরিশোধ করতে চলতি অর্থবছরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অব্যয়িত কয়েক কোটি টাকা তারা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরকে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। দেশে যখন দেড়শর মতো পত্রিকা ছিল, তখন কেন্দ্রীয়ভাবে বিজ্ঞাপন বিতরণ করা হতো জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন সাড়ে ১২০০ পত্রিকা। আর বিজ্ঞাপন এতো বেশি যে বাস্তবতার নিরিখে এগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়।’
তরুণদের কী শিক্ষা দিচ্ছে বিএনপি : তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত বুধবার বিএনপি চট্টগ্রামে তারুণ্যের সমাবেশ করেছে। এই সমাবেশ করে তারা তরুণদের কী শিক্ষা দিতে চাচ্ছে সেটিই হচ্ছে বিএনপির নেতাদের কাছে আমার প্রশ্ন? তারা সমাবেশে যাওয়ার সময় জামালখান এলাকায় দেয়ালে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন আমাদের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনসহ স্বাধীনতা সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন তাদের সকলের ম্যুরাল ছিল, চিত্র ছিল, সেগুলো আয়না দিয়ে বাঁধাই করা ছিল। তারুণ্যের সমাবেশে যাওয়ার সময় আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের ২০টির বেশি ম্যুরাল ভেঙে দেয়। এতে বোঝা যায় তারা আমাদের ইতিহাস–ঐতিহ্য মানে না। তারা আমাদের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চায়।’
বিএনপি তরুণদের ইতিহাস–ঐতিহ্য ধ্বংস করার শিক্ষা দিচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্ন তুলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তারা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালও ভাঙচুর করেছে। তাহলে এটাই ধরে নিতে হয় বিএনপি আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি কোনোটাই মানে না।’ চট্টগ্রামের এই ঘটনায় সরকার কী পদক্ষেপ নেবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতিমধ্যে মামলা হয়েছে। সরকার বদ্ধপরিকর, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যকে রাজনৈতিক পণ্য বানাবেন না : বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব যখন বক্তৃতা করেন তখন মনে হয় ভেতরে ভেতরে উনি ‘এফআরসিএস’ পাস করেছেন, উনি এখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও বটে। কারণ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, আর মির্জা ফখরুল সাহেব গলা ফাটিয়ে বলেন উনি জীবন–মরণ সন্ধিক্ষণে। এখন ডাক্তারদের কথা ঠিক, নাকি ফখরুল সাহেবের কথা ঠিক, এটাই হচ্ছে প্রশ্ন।’
‘বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য একজন মানুষের স্বাস্থ্যকে রাজনীতিকরণ করার উদাহরণ’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা বেগম জিয়াকে রাজনীতির পণ্য বানিয়েছে। এটা তার জন্য প্রচণ্ড অবমাননাকর। বেগম জিয়ার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা এবং সম্মান রেখে আমি তাদেরকে অনুরোধ জানাবো, দয়া করে বেগম জিয়াকে বা বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যকে রাজনৈতিক পণ্য বানাবেন না।’
সাংবাদিকরা এ সময় প্রশ্ন করেন– ছয় জন মার্কিন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশে নির্বাচন বিষয়ে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেওয়ার খবর, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রায় দুইশত বাংলাদেশীর প্রতিবাদলিপি দেওয়া এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কংগ্রেসম্যানদের চিঠি না পাওয়ার খবর বেরিয়েছে, এ বিষয়ে আপনার মত কি? এর জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি তো ইতিপূর্বে কংগ্রেসম্যানদের নামে ভুয়া চিঠিও প্রকাশ করেছিলো। যেখানে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে তারা চিঠি পায়নি, সেখানে কংগ্রেসম্যানদের চিঠির যথার্থতা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দেয়। তবে কংগ্রেসম্যানরা এ রকম চিঠি দিতেই পারে। শতশত কংগ্রেসম্যানের মধ্যে ৬ জন কংগ্রেসম্যান চিঠি দিয়েছে –এগুলো বাংলাদেশেই খবর হয়, অন্য কোনো দেশে খবর হয় না।’