নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আরো বাড়াতে হবে

| সোমবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ

সরকার নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা তৈরিতে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এটি জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার ২০৪১ সালে কর্মস্থলে নারীর অংশগ্রহণ ৫০:৫০ উন্নীত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, গত ১১ বছরে কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত নারীর সংখ্যা বেড়েছে ৭৩ লাখ ৫০ হাজার জন। কর্মসংস্থানের সংখ্যাগত দিক থেকে নারীর অংশগ্রহন পুরুষদের তুলনায় বাড়ছে চার গুণেরও বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যার ব্যুরোর হিসাবে দেশে প্রতি বছর নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রায় ছয় শতাংশ হারে। আর পুরুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার দেড় শতাংশ। ০০৫-০৬ অর্থবছরে নারী কর্মসংস্থান ছিল এক কোটি ১৩ লাখের মতো। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জরিপে এই সংখ্যাটি পাওয়া গেছে এক কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার জন। শূন্য দশকের পর থেকেই নারী অগ্রগতির শুরু বাংলাদেশে। পরের দশক থেকে গতিটা আরও বাড়ে। এরই মধ্যে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষায় মেয়েরা ছাড়িয়ে গেছে ছেলেদের আর উচ্চ মাধ্যমিকেও মেয়েরা ছেলেদের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। চাকরি ক্ষেত্রে মেয়েরা এখনও তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে রয়েছে যদিও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, এই খাতেও পার্থক্যটা কমে এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বের এক বিস্ময়ের নাম। আজ আনন্দের সাথে বলতে পারি, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক বিশ্বে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। বিরোধী দলের প্রধানও নারী। সংসদের স্পীকারও এক জন নারী। মন্ত্রিসভায় বেশ কয়েকজন নারী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। এই অর্জন অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখছে। বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীরা দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণকে সুসংহত করার জন্য জাতীয় সংসদে নারী আসনের সংখ্যা ৫০-এ উন্নীত করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে অনেক নারীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে ১২ হাজারের বেশি নারী জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়েছে।
নারীর কর্মসংস্থানের বেশি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে কল সেন্টারগুলোতে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে ক্ষুদ্র শিল্পও গড়ে তুলেছেন অনেক নারী। গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি এমন অনেক নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে রাজধানী জুড়ে। ই-কমার্স বা অনলাইন ভিত্তিক পণ্য বিক্রি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে অনেক নারীর। পাঁচ বছর আগেও যেসকল খাতে নারীদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়নি, সেসব খাতে এখন নারীদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
নারীদের কর্মসংস্থান হয়েছে গণপরিবহন খাতেও। বাস চালকের আসনে চলতি বছরই প্রথম নারীদের দেখা গেছে। পুরুষের চাইতে নারীদের ধৈর্য ক্ষমতা বেশি। এছাড়া পুরুষের চেয়ে নারীদের চাহিদা কম। তুলনামূলক কম বেতনে নারী শ্রমিক পাওয়া যায়। এ সকল যুক্তিতেই নারী শ্রমিক বেশ নিয়োগ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশ লেবার ফোর্স সার্ভে (এলএফএস) ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এক তথ্যে বলা হয়েছে, দেশে মোট এক কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা ছিল এক কোটি ৭৮ লাখ। ০১৩-১৪ অর্থবছরে তা ছিল কোটি ৬৮ লাখ। ২০১০-১১ অর্থবছরে ছিল আরও ছয় লাখ কম। পাঁচ বছর আগে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে নারী কর্মসংস্থান ছিল এক কোটি ১৩ লাখ। সে হিসাবে দেশে গত ১১ বছরে নারীর কর্মসংস্থানের সংখ্যা বেড়েছে ৭৩ লাখ ৫০ হাজার। রিসংখ্যার ব্যুরো যে হিসাব দিয়েছে তাতে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কৃষি খাতে নারী শ্রমিক ছিল এক কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার। এ ছাড়া ৩১ লাখ ৪৫ হাজার নারী শিল্প খাতে ও ৪৩ লাখ ৭২ হাজার সেবা খাতে নিয়োজিত।
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। এজন্য আমাদের রয়েছে বিশাল জনসংখ্যা। এই বিশাল জনসংখ্যার অংশ হলো নারী ও পুরুষ। যে দেশগুলো বিশ্বে উন্নত দেশের কাতারে দাঁড়াতে পেরেছে সেই সব দেশই নারীর ক্ষমতায়নের পথ সুগম করেছে। নারী ও পুরুষের পাশাপাশি অবদানেই এগিয়ে চলেছে। আমাদের দেশেও সেটাই হচ্ছে। একসময় যে ক্ষেত্রগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ চিন্তা করা যেত না অথবা সামাজিক প্রতিবন্ধকতাসমূহ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যেত সেই ক্ষেত্রগুলো এখন মুক্ত। ফলে নারীরা স্বাধীনভাবে এসব ক্ষেত্রে অংশ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। দেশ যতই এগিয়ে চলেছে পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন হলো দেশের উন্নয়ন কাজে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ। আজ প্রতিটি কাজে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, ব্যবসাবাণিজ্য, প্রবাস, আইসিটি মোটকথা অর্থনীতি প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীর অবদান বাড়ছে। যেখানে নারীরা ঘরের কাজ করত এখন সেখানে কেউ চাকরি, কেউ ব্যবসা করছে। বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবক্ষেত্রে রয়েছে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা। এই পৃষ্ঠপোষকতা আরো বাড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে