নারীমুক্তির নতুন দুয়ার

তথ্যপ্রযুক্তি

নুসাইবা নামির | শনিবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

গত দুই দশকে বাংলাদেশে সার্বিক শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে বিজ্ঞান শিক্ষায়ও গত দুই দশকে মেয়েদের অংশগ্রহণ বেড়েছে, যদিও তা ছেলেদের তুলনায় কম। আবার বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণায় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার এখনও বেশি। তবুও, ২০২৩ সালে এসে দেশের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। দিন যত গড়াচ্ছে এই খাতে নারীর অংশগ্রহণ, অবদান বাড়ছে।

আর এটি মেয়েদের বিজ্ঞান শিক্ষায় অংশগ্রহণেরই প্রমাণস্বরূপ। গ্রাফিকস, কল সেন্টারের কাজ পেরিয়ে পোগ্রামিং, ডেটা সায়েন্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংসে (আইওটি) নারীর আগ্রহ বাড়ছে। সাধারণ, করপোরেট, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে আইটি বিভাগে বর্তমানে একাধিক নারীকে কাজ করতে দেখা যায়।

মাত্র দুটি উদাহরণ এখানে তুলে ধরছি। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেটের সমীক্ষায় বিশ্বসেরা ১০ জন অণুজীব বিজ্ঞানীর মধ্যে একজন বাংলাদেশের তরুণী সেঁজুতি সাহা। তিনি শুধু নিজের জীবনেই বিজ্ঞানের চর্চা করেন না। তিনি শিশুদের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চা বাড়াতেও কাজ করছেন। তার পরিচালিত চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন থেকে পরিচালিত বিজ্ঞান বিষয়ক এই কর্মসূচির নাম, ‘গড়বো বিজ্ঞানী, সাজাবো বাংলাদেশ’।

বিজ্ঞান ও মানুষের মধ্যেকার ব্যবধান কমিয়ে আনাই যার লক্ষ্য। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত ‘২০২২ গ্লোবাল উইনার্স’ অনুষ্ঠানে ১০টি ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল চ্যাম্পিয়ন দলের নাম ঘোষণা করে নাসা। এই দলের দলনেতা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তরুণ শিক্ষার্থী টিসা খন্দকার।

এদিকে প্রযুক্তি ব্যবসায় নারীর অংশগ্রহণ এক দশক আগেই শুরু হয়েছে। সেসব ক্ষেত্রে নারীরা ভালো করছেন, ফলে তারই ধারাবাহিকতায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বে এসেছেন নারীরা। সংখ্যায় যেমন এটা বাড়ছে, তেমনি একটা সংগঠনকে শক্ত ভিত্তি দিতেও কঠোরভাবে কাজ করছেন তারা।

দেশের কয়েকটি সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন নারী। একাধিক সংগঠনের বিভিন্ন পদে নারীরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ভালোভাবেই সামলাচ্ছেন। খাত সংশ্লিষ্টরা অন্তত তাই বললেন। তাছাড়া এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ও ছিল ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন।’

অধুনা যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’এর কথা বলা হচ্ছে, সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে নারীর অনেক ভূমিকা রয়েছে। স্কুলকলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীরা যাতে আইটিতে পড়াশোনা করতে পারে সেজন্য তাদের বেশি করে বিভিন্ন সুযোগ করে দিতে হবে। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

তাই সব মেয়েরই এখানে অংশগ্রহণ করার সুযোগ আছে। যদিও এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। তবুও নারীরা এখন ডিজিটাল অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। একসময় নারীরা কেবল কলসেন্টার বা এরকম কিছু্‌ কাজ করতেন। আর এখন হাইটেক কাজ করছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট, ডেটা সায়েন্স নিয়ে কাজ করছেন।

নারীদের সামগ্রিক এই পবিবর্তনটি আশাজাগানিয়া যা দেশের জন্য ভালো কিছু নিয়ে এসেছে। করোনাকালীন নারীরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্যোক্তা হয়েছেন যার বহুলাংশে রয়েছে ফেসবুক এপে অনলাইন শপ। নারীরা এখন হরদম জুম, টিমস্‌ ইত্যাদি ব্যবহার করে মিটিং করছেন। আমরা পেয়েছি উইএর মতো উদ্যোক্তা প্লাটফর্ম। ফলে আশা করা যায় আগামী দিনগুলোতে তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কাজে উত্তরোত্তর এগিয়ে যাবে নারীরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টের অপরাজনীতি পরিত্যাজ্য
পরবর্তী নিবন্ধঈদ আসে ঈদ যায়