নারীদের ওপর মানসিক নির্যাতনের জন্য নারীরাই অধিকাংশে দায়ী

জোবায়দা আক্তার চৌধুরী | মঙ্গলবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২০ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

নারীর ওপর সহিংসতা ও নির্যাতন নিয়ে নানাভাবে আমরা আলাপ আলোচনা করে থাকি। কিন্তু নারীদের ওপর যে মানসিক নির্যাতন হয় সেটা নিয়ে আমরা কতটা ভাবি? মানসিক নির্যাতনের বিষয়টি সবসময় আড়ালেই থেকে যায়। নারীরা কাদের দ্বারা নির্যাতিত হয় বেশি? শুধু কি তারা পুরুষ দ্বারা নির্যাতিত হয়? সত্যি কথা বলতে কী নারী দ্বারা নারীরাই বেশি মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। এই নির্যাতন শারীরিক নির্যাতনের চেয়েও ভয়ঙ্কর। এই অত্যাচার দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায়। জীবন শুরু করার শুরুতেই একজন নারী যে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় সেটা তার মনে দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষতের সৃষ্টি করে। যিনি এই যন্ত্রণা তৈরী করছেন, তিনিও হয়তো বুঝতেও পারছেন না তিনি একটা মেয়ের কতটা ক্ষতি করছেন। বেশিরভাগ বিবাহিত নারীরা প্রথম মানসিকভাবে নির্যাতিত হয় তার শ্বশুরবাড়ি থেকে। সবার ক্ষেত্রে এমন হয় সেটাও আবার বলা যাবে না। দেখা যায় নারীরা শাশুড়ীকে মায়ের স্থান দিলেও শাশুড়ী ছেলের বৌকে মেয়ের স্থান দিতে পারেন না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। সব ননদ খারাপ হয় সেটাও বলা যাবে না। ভাল খারাপ মিশিয়েই মানুষ। অনেক ননদ স্বার্থপর হলেও অতটা হয়তো ভয়ঙ্কর হয় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংসার ভাঙার বা অশান্তির কারণ হয় ননদরা। আবার একজন জা (ভাসুর, দেবরের বৌ ) যিনি নিজেও বৌ হয়ে এসেছেন একই পরিবারে। তারপরেও দেখা যায় সমব্যথী না হয়ে হিংসা থেকে তার হিংস্র রূপটাই বেশি বেরিয়ে আসে। আমরা ভাবি না বা বুঝতে চাই না একটা মেয়ে যখন নতুন বৌ হয়ে আসে, তখন সে নতুন একটি পরিবেশ থেকে আসে। এই মেয়েটি জন্ম থেকে যে পরিবেশে ছিল, সে সেটা ফেলে এসেছে। পিতামাতা, ভাইবোন, বান্ধবী, আত্মীয়স্বজন, সকল প্রিয়জন ছেড়ে নতুন একটি পরিবেশে এসেছে। নতুন কিছু সম্পর্ককে আপন করে নিতে হচ্ছে তাকে। তখন উচিত শ্বশুরবাড়ির মানুষদের সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। কিন্তু আমরা সেটা না করে তার উপর দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেই। তার দোষ ত্রুটিগুলো ধরতে থাকি। তার সামনে বা আড়ালে তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলতে থাকি। অতিষ্ঠ করে তুলতে থাকি একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীর জীবন। বিবেক বিবেচনা তখন তাদের লোপ পেতে থাকে।
বর্তমানে ডিভোর্সের সংখ্যাটা বেশি। আগেকার দিনে যদিও মেয়েদের বাপের বাড়ি থেকে বলা হতো মেনে নিয়ে সংসার করতে। শ্বশুরবাড়ি মেয়েদের আসল বাড়ি। শত যন্ত্রণাতে টু শব্দটিও যেন না করে। এভাবে পদে পদে নারীরা নির্যাতিত হয়েও মুখ বুজে ছিল সংসার টেকানোর জন্য। সম্‌ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েরা শত মানসিক যন্ত্রণা মাথায় করে চুপ থেকে পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করে বছরের পর বছর যুগের পর যুগ বয়ে বেড়িয়েছে।
একজন নারী যখন আরেকজন নারীকে মানসিক নির্যাতন করেন, সেই নির্যাতনকারী নারী আবার একটা সময় এসে তারই মেয়ের বিবাহিত জীবন যেন সুখের হয় সেই স্বপ্ন দেখেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানুষ বাঁচে তার কর্মে
পরবর্তী নিবন্ধ‘মন ছোটে রঙে বোনা উপত্যকায়’