নশ্বর জীবনে অহংবোধের ক্ষয় হোক

শিউলী নাথ | সোমবার , ৯ মে, ২০২২ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

মানবজীবন ক্ষণস্থায়ী। পদ্মপাতার জলের ন্যায় তার স্থায়িত্ব। পাতা থেকে টুপ করে জলের ফোঁটা গড়িয়ে পড়তে যেমন সময় লাগে না, তেমনি এই দেহ থেকে প্রাণবায়ু বের হতেও সময় লাগে না। পৃথিবীতে আসা-যাওয়ার এই ক্ষুদ্র সময়টুকুতে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, বিশ্বাস ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করে রাখা আবশ্যক। স্কুলে একবার এক শিক্ষক বলেছিলেন, ‘মানুষকে কখনো ছোট বা হেয় কোরো না। কখন যে কার রিজিকের দরজা আল্লাহ খুলে দেন তা বলা মুশকিল’। ক্ষমতা, কর্তৃত্ব সবসময় থাকে না। তাই এসবের উপর নির্ভরতা কমিয়ে এমন সম্পর্ক স্থাপন করা উচিৎ যেখানে শোষণ ও শাসন দণ্ডের প্রয়োজন হবে না। এর পেছনে প্রথম সোপান হলো পরিবার।

বড়দের অতিশাসনে ছোটরা যেন নিগৃহীত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গুরুজন শাসন করবেন, তাই বলে শাসনের মাপকাঠি যেন সীমা লঙ্ঘন না করে সেভাবে সংসার পরিচালনা করতে হবে। সময়ের বলিরেখায় একদিন ছোটরাও বড় হয়ে যাবে। অতি শাসনের মাত্রায় তারা যেন আবার গুরুজনদের উপর প্রতিশোধমূলক আচরণ না করে বসে! বয়স্ক বাবা-মার প্রতি তাদের সন্তানরা (ছেলে বা মেয়েই হোক) সমান দায়িত্ব পালন করবে, এটাই স্বাভাবিক। রাগ বা ক্রোধের বশে সমাজটাকে বৃদ্ধাশ্রম করার প্রয়োজন নেই। আদর-ভালোবাসা- শ্রদ্ধা এসবের সমন্বয়ে সুন্দর পরিবার গড়ে তোলা সম্ভব।

দ্বিতীয় সোপান আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে বাস করতে গেলে শ্রেণি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সকলের সাহচর্যে আসতে হয়। এক্ষেত্রে কেউ অতি সাধারণ, কেউ বা সাধারণ আবার কেউ বা অসাধারণ জীবন যাপন করেন। নীতি বা আদর্শের ক্ষেত্রেও সবাই এক না। তবু্‌ও মানুষকে কাজের খাতিরে চলতে হয়। যাদের হাতে শাসনদণ্ড তাদের দায়িত্বজ্ঞান প্রখর হওয়াই স্বাভাবিক। অন্যের কথায় প্রলুব্ধ হওয়ার ব্যক্তি হয়তো তারা নন। ন্যায়ের শাসনদণ্ড হাতে নিয়ে যদি অন্যায় করে বসেন, তবে এর ভুক্তভোগী হতে হবে অতি সাধারণ শ্রেণির মানুষকে।

শাসন কঠোর হওয়ার চেয়ে সহানুভূতিশীল হলে সেই সমাজ ব্যবস্থা উত্তম হতে বাধ্য। পরিবারের বড়দের বিচক্ষণতায় যেমন পরিবার রক্ষা পায় তেমনি সমাজের প্রত্যেক শাখার মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিদের সৌহার্দপূর্ণতায় সমাজ বা প্রতিষ্ঠান সমৃদ্ধ হয়। তাই পরিবার বা সমাজের যে যেখানে আসীন তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে। ছোট খাট বিষয়ে কাউকে কষ্টের সম্মূখীন হতে হয়, এরূপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজেদের মেধা, বুদ্ধি, প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে হবে। কখনো যেন কোনো কাজের জন্য আফসোস করতে না হয়। জীবন একটাই! এই চলমান জীবনকে হাসি-খুশি উচ্ছ্বাসে ভরে রাখতে হলে অহংবোধকে চিরতরে বিদায় জানাতে হবে এবং ছোট বড় সকলের সাথে সমন্বয় রেখে চলতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনেতিবাচক চিন্তাভাবনা মানসিক অশান্তির কারণ
পরবর্তী নিবন্ধঅলৌকিক যাত্রা