নরেন্দ্র দেব (১৮৮৮–১৯৭১)। কবি ও সাহিত্যিক। তিনি ছিলেন খ্যাতনামা সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেনেরও পিতা। নরেন্দ্র দেবের জন্ম ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই জুলাই পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ঠনঠনিয়ার তৎকালীন বনেদি ও প্রগতিশীল পরিবারে। পিতা নগেন্দ্রনাথ দেব। জ্যাঠামহাশয় উপেন্দ্র চন্দ্র ছিলেন ডিরোজিওর শিষ্য। যৌবনে জ্ঞাতি–দাদা রাজেন দেবের প্রভাবে গুপ্ত বিপ্লবী দলে যোগ দিলেও সাহিত্য–ক্ষেত্রেই জীবন কাটিয়েছেন। কলকাতার মেট্রোপলিটন স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করেন, কিন্তু স্বাস্থ্যের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সারাজীবন পড়াশোনার মধ্যেই নিয়োজিত থাকেন। ব্রহ্মবান্ধবের সান্ধ্য পত্রিকাতে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তার রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বসুধারা’, গল্পগ্রন্থ ‘চতুর্বেদাশ্রম’ ও প্রথম উপন্যাস ‘গরমিল’। তবে ‘ওমর খৈয়াম’ –এর কাব্যানুবাদ ১৯২৬ সালে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার খ্যাতি বিস্তৃত হয়। কবিতা, গল্প, উপন্যাস এবং শিশু সাহিত্য সর্বক্ষেত্রেই তিনি কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ‘ভারতী‘, ‘কল্লোল‘, ‘ কৃত্তিবাস‘ ― বাংলা সাহিত্যের তিন যুগের এই পত্রিকাগুলির লেখকগোষ্ঠীর সঙ্গে তার সমান হৃদ্যতা ছিল। তিনি বিখ্যাত নাট্য–সাপ্তাহিক ‘নাচঘরের‘ ও প্রথম চলচ্চিত্র সাপ্তাহিক ‘বায়োস্কোপ’–এর পরিচালক ছিলেন। ছোটদের জন্য প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা ‘পাঠশালা ‘তিনি দীর্ঘ পনের বৎসর সম্পাদনা করেন। সাহিত্য জীবনে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, অক্ষয় বড়াল, কান্তকবি, নজরুল, মোহিতলাল এবং সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের অন্তরঙ্গ ছিলেন। আবার সিনেমা–থিয়েটারের তৎকালীন শিল্পীরাও তার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বালবিধবা সাহিত্যিক রাধারাণীর সঙ্গে তার বিবাহ সেকালের এক আলোচ্য বিষয় ছিল। এই বিবাহে রবীন্দ্রনাথ আশীর্বাণী পাঠান এবং শরৎচন্দ্র উপস্থিত থাকেন। নরেন্দ্র দেবের রচিত প্রথম ছোটদের নাটক ‘ফুলের আয়না ‘নাট্যাচার্য শিশিরকুমার’ স্টার মঞ্চে প্রযোজনা করেন। তিনি ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে ‘ওমর খৈয়াম’ এবং ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘মেঘদূত’ অনুবাদ করেন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স–সহ পশ্চিম ইউরোপ এবং ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়া, ফিনল্যান্ড ও চেকোশ্লোভাকিয়া ভ্রমণ করেন। নরেন্দ্র দেব ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ‘মৌচাক পুরস্কার’, ‘ভুবনমোহিনী স্বর্ণ পদ’ এবং ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ‘শিশিরকুমার পুরস্কার’ লাভ করেন। নরেন্দ্র দেব ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ শেএপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।