নগরীর ফ্রি-পোর্ট, ইপিজেড, পতেঙ্গা-হালিশহর, উত্তর আগ্রাবাদসহ সমুদ্রবর্তী এলাকাগুলোতে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণ অনুসন্ধানে বাসা-বাড়ি থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) রিসার্চ টিম। গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর ফ্রি-পোর্ট এলাকার ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ কলেজ ও হালিশহরের বেশ কয়েকটি স্পটে গিয়ে তারা এ সংক্রান্ত নমুনা সংগ্রহ করেন। এ তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ঢাকা থেকে আসা রিসার্চ টিম নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। এ সংক্রান্ত কাজে তাদের আরো দুয়েকদিন লাগতে পারে। পরে তারা নমুনা ঢাকায় নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণ নির্ণয় করার চেষ্টা করবেন।
এর আগে আইইডিসিআর’র ৭ সদস্যের রিসার্চ টিম গত শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছে। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকসিয়াস অ্যান্ড ডিজিজেস) ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে যান। সেখানে তারা পানিবাহিত (ডায়রিয়া-কলেরা) রোগে আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রোগীদের সাথে কথা বলেন এবং খোঁজ-খবর নেন। রোগীদের বাসা-বাড়ির ঠিকানাও সংগ্রহ করেন। গতকাল শনিবার দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা এ সংক্রান্ত কাজে নেমেছেন বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। তিনি জানান, একটি গ্রুপ রোগীদের বাসা-বাড়ি গিয়ে খাওয়ার ও ব্যবহারের পানিসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছেন। অপর গ্রুপ বিআইটিআইডিতে রোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। এ কাজে তাদের আরো দুয়েকদিন লাগতে পারে।
প্রসঙ্গত, নগরীর প্রি-পোর্ট, ইপিজেড, পতেঙ্গা-হালিশহর, উত্তর আগ্রাবাদসহ সমুদ্রবর্তী এলাকাগুলোতে ফের দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের (ডায়রিয়া-কলেরা) প্রকোপ। গতকাল পর্যন্ত এসব এলাকার আড়াই শতাধিক রোগী এই ডায়রিয়া-কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকসিয়াস এন্ড ডিজিজেস) ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এর আগে ২০১৮ সালের এপ্রিল-মে মাসে জন্ডিসের প্রকোপ দেখা দেয় নগরীর হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায়। মৃত্যু হয় ৩ জনের। বছর পেরুতেই (২০১৯ সালের জুলাই মাসে) পানিবাহিত ডায়ারিয়া-কলেরা ছড়িয়ে পড়ে ঘরে-ঘরে। দুই বছর ব্যবধানে গত মে মাসে (চলতি বছরের) পুনরায় পানিবাহিত ডায়রিয়া ও কলেরা রোগের কবলে পড়েন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তবে ওই সময় হালিশহর ছাড়াও বন্দরসহ সমুদ্রবর্তী এলাকাগুলোতে পানিবাহিত এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এবার তৃতীয় দফায় পানিবাহিত এই (ডায়রিয়া-কলেরা) রোগের কবলে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। প্রি-পোর্ট, ইপিজেড, পতেঙ্গা-হালিশহর, উত্তর আগ্রাবাদসহ সমূদ্রবর্তী এলাকাগুলোতে এই রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
গত ৬ দিনে এসব এলাকার আড়াই শতাধিক রোগী ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকসিয়াস এন্ড ডিজিজেস) ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। যদিও অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৫০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বলে জানান বিআইটিআইডি’র ট্রপিক্যাল মেডিসিন এন্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিসের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মামুনুর রশীদ। তিনি জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের অধিকাংশই (৯০ ভাগ) সমুদ্রবর্তী (প্রি-পোর্ট, ইপিজেড, পতেঙ্গা-হালিশহর, উত্তর আগ্রাবাদ) এলাকার।












