নন্দীগ্রামে শেষ পর্যন্ত জিতলেন শুভেন্দু

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন

আজাদী অনলাইন | রবিবার , ২ মে, ২০২১ at ১০:২৩ অপরাহ্ণ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে আলোচিত নন্দীগ্রাম আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে জিতেছেন বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী।
আজ রবিবার (২ মে) সন্ধ্যায় প্রথমে এক হাজার ২০১ ভোটে তৃণমূল নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতেছেন খবর এলেও শেষ পর্যন্ত শুভেন্দুকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।। বিডিনিউজ
ঐ খবর প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যেই আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে ফোনে নন্দীগ্রামে নিজেকে বিজয়ী দাবি করেন এক সময় মমতার ‘লেফটেনেন্ট’ হিসেবে পরিচিত শুভেন্দু যিনি তৃণমূল ছেড়ে এবারই প্রথম পদ্মফুল প্রতীক (বিজেপি) নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন।
দুই ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীর জয় দাবির প্রেক্ষিতে সন্ধ্যা থেকেই নন্দীগ্রাম আসনের ফল নিয়ে নাটকীয়তা শুরু হয়।
একদিকে নির্বাচন কমিশন ভোট পুনর্গণনা করবেন কি না তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে মমতা সাফ জানিয়ে দেন, নন্দীগ্রামের মানুষ যে রায়ই দিক তিনি তা মেনে নেবেন। একই সঙ্গে তিনি নন্দীগ্রামে ‘ভোট লুটের’ অভিযোগ তুলে আদালতে যাওয়ারও হুমকি দেন।
এ নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর স্থানীয় সময় রাত ৮টার পরে নির্বাচন কমিশন নন্দীগ্রামে ভোট পুনর্গণনা না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে ঐ আসনে শুভেন্দুকে বিজয়ী ঘোষণা করেন বলে জানায় কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার।
ঐ সময় শুভেন্দু এক টুইটে ভোটের চূড়ান্ত রাউন্ডের গণনার ‘টেবুলেশন শিট’ পোস্ট করে নিজের বিজয় দাবি করেন।
ঐ ‘শিট’ অনুযায়ী মমতার থেকে তিনি এক হাজার ৭৩৬ ভোট বেশি পেয়েছেন।
নন্দীগ্রামে এক লাখ নয় হাজার ৬৭৩ ভোট পেয়েছেন শুভেন্দু। মমতা পেয়েছেন এক লাখ সাত হাজার ৯৩৭ ভোট।
‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড’ নন্দীগ্রামের ভোটের ফল নিয়ে অবশ্য উত্তেজনা ছিল দিনভরই। রবিবার সকাল থেকে ষষ্ঠ রাউন্ডের ভোট গণনা শেষে শুভেন্দু অধিকারী ৭ হাজার ২৬২ ভোটে মমতার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মমতা ব্যবধান কমাতে শুরু করেন। এ আসনে মোট ১৭ রাউন্ডে ভোট গণনা শেষে প্রথম মমতা জিতেছেন বলে খবর বের হয়।
২০১৬ সালে মমতার দল তৃণমূলের হয়ে নন্দীগ্রাম আসনে জিতেছিলেন শুভেন্দু। গত বছর ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।
মমতার সরকারে পরিবহন ও পরিবেশ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লোকসভায় তৃণমূলের প্রতিনিধিত্ব করা শুভেন্দু ১৯৯৫ সালে কংগ্রেসের হয়ে কাউন্সিলর নির্বাচনে জেতেন। নন্দীগ্রামে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রভাব সুবিদিত।
এবার ভোটের আগে মমতাকে হারানোর ‘চ্যালেঞ্জ’ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। তৃণমূলনেত্রী কলকাতায় নিজের আসন ছেড়ে নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণও করেন।
মমতা নন্দীগ্রাম আসনে হারলেও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস যে টানা তৃতীয়বারের মতো পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে তা এখন নিশ্চিত যদিও আনুষ্ঠানিক ফলাফল এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
এরই মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক টুইটে মমতাকে পশ্চিমবঙ্গে ‘তার দলের জয়ে’ অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তিনি এবারের বিধানসভা নির্বাচনে শুধু নন্দীগ্রাম আসনেই প্রার্থী হয়েছিলেন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তিনি এবার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি না।
ভারতীয় সংবিধানের ১৬৩ ও ১৬৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশটির কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে হলে তাকে ভারতের নাগরিক হতে হবে এবং বয়স হতে হবে ২৫ বা তার বেশি।
তাকে রাজ্যের বিধানসভার সদস্য হতে হবে। আর বিধানসভার সদস্য না হয়েও কেউ যদি মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন তাকে রাজ্যপালের অনুমতি নিতে হবে।
কেউ হেরে যাওয়ার পরও তার দল যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং দলের নির্বাচিত সদস্যরা যদি তাকে নেতা নির্বাচিত করেন তাহলে তার মুখ্যমন্ত্রী হতে আইনগত কোনো বাধা নেই।
তবে ভোটে না জিতেও মুখ্যমন্ত্রী হলে তাকে ঐ পদে বসার ১৮০ দিনের মধ্যে কোনো একটি আসন থেকে জিতে আসতে হবে। তা না পারলে ছেড়ে দিতে হবে পদ।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ২৯৪ আসনের মধ্যে দু’টির ভোটগ্রহণ প্রার্থীর মৃত্যুতে স্থগিত রয়েছে। ফলে এর একটি আসনে ছয় মাসের মধ্যে জিতে এলেই মমতার এ সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকনাফে শপিং ব্যাগের ভিতর থেকে ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধপেকুয়ায় বোরকা পরে এসে এলোপাথাড়ি গুলি, হতাহত ৩