নতুন সমীকরণে কার লাভ, কার ক্ষতি

এম নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | বৃহস্পতিবার , ২৩ মে, ২০২৪ at ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ

যতই দিন যাচ্ছে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা ততই বাড়ছে। প্রার্থিতা নিয়ে সাবেকবর্তমান দুই মন্ত্রীর তৎপরতায় পুরো জেলার আলোচনার কেন্দ্রে এখন টানেল জনপদের এই নির্বাচন। ভূমিমন্ত্রীর সমর্থন বদল, ভোটের মাত্র এক সপ্তাহ আগে এক প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়ায় কার লাভ কার ক্ষতি সেই হিসাব কষছেন সাধারণ ভোটারেরা। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সমর্থন নিয়ে মাঠে আছেন তৌহিদুল হক চৌধুরী (দোয়াতকলম), অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারীরা আবার একাট্টা হয়েছেন কাজী মোজাম্মেল হক (আনারস) এর পক্ষে। অপর প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী (মোটর সাইকেল) প্রায় তিন মাস ধরে আনুষ্ঠানিকঅনানুষ্ঠানিক প্রচারণা চালিয়ে এলেও মঙ্গলবার রাতে সরে দাঁড়িয়েছেন। এর আগে নির্বাচনে লড়তে তিনি বটতলী ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকেও পদত্যাগ করেন।

আগামী ২৯ মে’র নির্বাচনে ২ লাখ ৩২ হাজার ভোটার ৭৪টি কেন্দ্রে নতুন উপজেলা চেয়ারম্যান বানাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচনে এতদিন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রকাশ্য সমর্থন নিয়ে প্রচারণায় ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ করে নগরীর সার্সন রোডের বাসায় বিশেষ সভা ডেকে তাকে বসিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে সাবেক মন্ত্রীর সমর্থন দোয়াতকলম প্রতীকের প্রার্থী তৌহিদুল হক চৌধুরীর দিকে। তৌহিদ গত দুই বারের উপজেলা চেয়ারম্যান। মান্নান নীরবে তার রাজনৈতিক নেতার সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ভেতরে বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে। এখান থেকেও কথা বেচাকেনা হয়। তাই সবাইকে সাবধান থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

মান্নানের সেই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। প্রশ্ন উঠেছে সার্সন রোডের বাসায় সেদিন যারা বিশেষ সভায় হাজির হয়েছেন সবাই সাবেক ভূমিমন্ত্রীর অনুসারী। তাহলে কথা বেচাকেনা হয় বা ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে কাদের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিসেই প্রশ্নের পরিষ্কার কোনো জবাব অবশ্য তিনি দেননি। মান্নানের পক্ষে ভোটের প্রচারণায় ছিলেন এমন অনেকে গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে তৌহিদের দোয়াত কলমের পক্ষে ভোট চেয়েছেন।

তৌহিদ এ পর্যন্ত দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও কখনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েননি। গত দুইবার সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বলয়ে থেকে হেসেখেলে বৈতরণী পার হওয়া তৌহিদের নির্বাচনী প্রচারণার শুরুটা ছিল চ্যালেঞ্জিং। শুরুতে জাবেদের সমর্থন বঞ্চিত হওয়ায় তিনি মূলত রাজনীতিতে কম সক্রিয় ভোটারদের টানতে সক্ষম হন। এর মধ্যে কেন্দ্র কমিটি গঠনের কাজও শেষ করেছেন। কিন্তু মান্নান চৌধুরী বসে যাওয়ার পর তার অনুসারীদের কীভাবে সমন্বয় করা হবে, কাদের নেতৃত্বে কেন্দ্র কমিটি পরিচালিত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা মান্নান চৌধুরীও দলের মূল ধারার নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটের মাঠে ছিলেন। এখন উভয় পক্ষকে সমন্বয় করে প্রচারণা এগিয়ে যাওয়া এবং এতদিন তার সাথে থাকা নীরব ভোটারদের ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটারেরা।

হাজীগাঁও এলাকার ভোটার আবদুর রহিম বলেন, তৌহিদুল হক দুই রাজনৈতিক শক্তির বাইরে সাধারণ মানুষের প্রার্থী হিসেবে প্রচার করেছিলেন। এতদিন তার সঙ্গে রাজনৈতিক নেতা বেশি ছিল না। এখন তিনি কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবেন সেটা দেখার বিষয়।

এ প্রসঙ্গে তৌহিদুল হক চৌধুরী আজাদীকে বলেন, সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমি নির্বাচিত হলে অতীতের ন্যায় এলাকার উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। এলাকার মানুষের ভালোবাসায় আমি অভিভূত। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সমর্থনে এখন আমি অনেকদূর এগিয়ে গেলাম। দলের নেতা কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এস এম আলমগীর চৌধুরী বলেন, তৌহিদুল হক চৌধুরীর পক্ষে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছি। গতকাল তৈলারদ্বীপে যৌথভাবে বর্ধিত সভা করেছি। গতকাল তৌহিদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এস এম আলমগীর চৌধুরী, সহসভাপতি ভিপি জাফর উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এম এ মালেক, ছগীর আজাদ, বোরহান উদ্দিন চৌধুরী মুরাদ প্রমুখ।

অপর প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক লড়ছেন আনারস প্রতীকে। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে প্রার্থী নিয়ে মেরুকরণ ও বসিয়ে দেওয়াকে পাত্তা না দিয়ে বলেন, সাধারণ মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমি প্রার্থী হয়েছি। আল্লাহর উপর ভরসা ও মানুষের ভালবাসা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। একটি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা। আমি ভোট না করলে আগের মতোই তারা ভাগাভাগি শুরু করত। মানুষ মুক্তি চায়। দীর্ঘদিন পর জনগণ ভোটের ব্যালট পাবে এবং তাদের পছন্দের আনারস প্রতীকে ভোট দেবে।

আনারস প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা যুবনেতা মোজাম্মেল হক বলেন, কাজী মোজাম্মেল ইতিমধ্যে আনোয়ারা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি আনোয়ারাবাসীর মুক্তির দূত হয়ে এসেছেন। কোনো ষড়যন্ত্র এই অগ্রযাত্রা রুখতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। ইতিমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ৭৪ কেন্দ্রের নির্বাচনী এজেন্ট তালিকাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি শেষের পথে।

গতকাল বুধবার আনারস প্রতীকের পক্ষে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী, সদস্য প্রফেসর ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ ইদ্রিস, নাজিম উদ্দীন সুজন, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল বশর, কেন্দ্রীয় যুব লীগের সাবেক সদস্য ছাবের আহমেদ চৌধুরীসহ সিনিয়র নেতারা প্রচারণায় অংশ নেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই হেভিওয়েট প্রার্থী নিয়ে আ. লীগে দ্বিধা বিভক্তি
পরবর্তী নিবন্ধডিসি-ইউএনওরা পাচ্ছেন ২৬১ বিলাসবহুল গাড়ি