নতুন বটলিং প্লান্ট করবে বিপিসি

এলপিজিএলের জন্য সীতাকুণ্ডে ১০ একর জমি কেনার সিদ্ধান্ত

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩০ মে, ২০২১ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

দেশের জ্বালানি খাতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে লিকুফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু সরকারি নানা জটিলতার কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল) বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না। সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বাজারে পাল্লা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বিপিসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে নতুন বটলিং প্লান্ট বসানোর জন্য ৪০ কোটি টাকায় জমি কেনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বিপিসি। সীতাকুণ্ডের লতিফপুরে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ১০ একর জমি কেনার জন্য ৫ সদস্যের কমিটিও গঠন করেছে এলপিজিএল। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সরকারি এলপি গ্যাস বিপণনে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ ক্রমান্বয়ে কমে যাবার কারণে দেশে ক্রমেই বাড়ছে এলপিজির ব্যবহার। চাহিদা বাড়ার কারণে দিনে দিনে বড় হচ্ছে এসব বোতলজাত গ্যাসের বাজার। সূত্র জানায়, এলপিজি ব্যবসার জন্য ৬৩টির অধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জ্বালানি বিভাগের অনুমোদন নিয়েছে। ইতোমধ্যে ২৭টি প্রতিষ্ঠান বাজারে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
এর মধ্যে অর্ধেক প্রতিষ্ঠান সরাসরি আমদানি ও বোতলজাত করলেও অন্যরা আমদানিকারকদের কাছ থেকে কিনে বোতলজাত ও বাজারজাত করে আসছে। বেসরকারি পেট্রোলিয়াম পরিশোধন কারখানাতেও এলপি গ্যাস বাজারজাত করছে অনেকে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এলপিজিএল অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পাওয়া এলপিজি বোতলজাত করে বাজারজাত করছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে দেশে আড়াই লাখ টন এলপিজি ব্যবহার হয়েছে। এরপর ২০১৬ সালে ৪ লাখ টন এবং ২০১৭ সালে সাড়ে ৬ লাখ টনে দাঁড়ায় এলপি গ্যাসের ব্যবহার। ২০১৮ সালে তা সাড়ে ৮ লাখ টন ছাড়িয়ে যায়। ২০১৯ সালে দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন এলপি গ্যাস ব্যবহৃত হয়। সর্বশেষ গত বছর ১২ লাখ টনের বেশি এলপি গ্যাস ব্যবহৃত হয়েছে।
জানা যায়, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) ক্রুড অয়েল প্রক্রিয়াজাত করার সময় উপজাত হিসেবে উৎপাদিত হয় এলপিজি। তা বোতলজাত করে বাজারজাত করতে ১৯৭৭-৭৮ সালে চট্টগ্রামে এলপিজি স্টোরেজ ও বটলিং প্লান্ট নির্মাণ করে বিপিসি। প্রথমে যমুনা অয়েল লিমিটেড প্লান্টটি বসালেও বর্তমানে বিপিসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এলপিজি বোতলজাত করছে এলপিজিএল। প্রতিষ্ঠানটি বাজারে সরবরাহ বাড়াতে এবার আমদানিকৃত এলপিজি বোতলজাত করে বিক্রির পরিকল্পনা নিয়েছে।
এর অংশ হিসেবে সীতাকুণ্ডের লতিফপুরে ১০ একর জমি কেনার পদক্ষেপ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। প্রাথমিক পর্যায়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে একটি জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তবে জমিটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অংশ হওয়ায় উদ্যোগটি ভেস্তে যায়। পরে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লতিফপুর এলাকায় বঙ্গোপসাগর তীর সংলগ্ন ১০ একর জমি কেনার সিদ্ধান্ত দেয় বিপিসি।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, এলপিজিএল চট্টগ্রাম ও কৈলাসটিলা প্লান্টে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৩ হাজার ৪১৬ মেট্রিক টন এলপিজি বোতলজাত করে বিক্রি করেছে। এতে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ৩ হাজার ৩৬৫ মেট্রিক টন, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ৩ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ৩ হাজার ১৭২ মেট্রিক টন, স্ট্যান্ডার্ট এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এসএওসিএল) ২ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন এবং এলপিজিএল সরাসরি বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে ৪৪৫ মেট্রিক টন এলপিজি বাজারজাত করেছে।
এলপিজিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু হানিফ দৈনিক আজাদীকে বলেন, দেশে এলপি গ্যাসের বাজার দিন দিন বাড়ছে। এলপি গ্যাস লিমিটেডও বাজারে অংশীদারিত্ব বাড়াতে চায়। এজন্য সীতাকুণ্ডের লতিফপুরে একটি বটলিং প্লান্ট স্থাপন করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে একটি জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল। এজন্য ৪০ কোটি টাকা জেলা প্রশাসনকে পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু জায়গাটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের হওয়ায় ওই টাকায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জমি কেনার সিদ্ধান্ত দিয়েছে বিপিসি। প্রকল্পের স্থান চিহ্নিত ও জমি বাচাইয়ের জন্য ৫ সদস্যের কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। লতিফপুরে সাগরতীরের কাছেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। কমিটির প্রতিবেদনের পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপরিস্থিতি অনুকূলে না এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঝুঁকি নেব না : শিক্ষামন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধবাবুল আক্তারকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তর