পড়া, শুধু একটা কাজ নয়, এটা আমাদের মনকে সজীব রাখার এক ধরনের উপায়। আর বই পড়া মানে শুধু তথ্য জ্ঞান অর্জন নয়, আমাদের চিন্তা–ভাবনার ক্ষেত্রও প্রসারিত হয়। আমরা যখন নতুন বই পড়ি, তখন সেটা যেন এক নতুন অনুভূতির জন্ম দেয়। বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা আমাদের জন্য নতুন কিছু শেখার সুযোগ হয়ে দাঁড়ায়। নতুন বইয়ের গন্ধই সবচেয়ে বেশি মজার এবং পড়তে ভালো লাগে। বইয়ের প্রথম দিকের অনুভূতিটাই আলাদা, যা আমাদের আগ্রহ এবং মনোযোগ ধরে রাখে। নতুন অবস্থায় বই শেষ করতে যেমন সময় বেশি লাগে না, তেমন প্রেশারও কম থাকে। বইয়ের প্রথম দিকের অধ্যায়গুলি আরও সহজ এবং মজাদার মনে হয়, কারণ আমাদের মনের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ থাকে যে, এই বইটি আমাদের জন্য কিছু নতুন ধারণা বা চিন্তা নিয়ে আসবে। আমাদের মস্তিষ্কও নতুন কিছু শিখতে আগ্রহী হয়ে থাকে, আর এ কারণে পড়াশোনার সময়ও আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে। কিন্তু, বই পুরানো হওয়ার সাথে সাথেই আমাদের মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন আসে। সেই বইটি আর আগের মতো আকর্ষণীয় বা সহজ মনে হয় না। এক সময় যে বইটি ভালো লাগত, এখন তা পড়ে মনে হয় যেন কোনো চাপ। এটাই একসময় আমাদের মধ্যে তৈরি হয়, যখন আমরা সেমিস্টারের শেষের দিকে পৌঁছাই এবং ফাইনাল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। একেকটি বিষয় পড়ে এমন মনে হয় যেন অযথা সময় নষ্ট হচ্ছে, আর আমরা যত তাড়াতাড়ি বইটি শেষ করতে পারি ততই ভালো।
এক সময়ের ভালো লাগা বইগুলো শেষের দিকে এসে আর আগের মতো ভালো লাগে না। তখন আমরা শুধু একটা ভালো রেজাল্ট অর্জনের জন্য বইটি শেষ করার চেষ্টা করি। এটা যেন একটা বাধ্যবাধকতা হয়ে দাঁড়ায়। বছরের শেষের দিকে একেবারে কোনো মতে বইটি পড়ে এবং ভালো রেজাল্ট করে, যত দ্রুত সেই বইটি দূরে রাখতে পারি, ততই যেন ভালো লাগে। তবে, আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বছরের শুরুতেই পড়াশোনা শুরু করা। বইটি যখন শুরু থেকেই পড়বো, তখন সেটা যেমন মজাদার লাগবে, তেমনি কোনো ধরনের চাপ বা উদ্বেগও থাকবে না। পরীক্ষার শেষ মুহূর্তে এসে এক্সট্রা চাপ নেওয়া থেকে বাঁচবো। আগে থেকেই পড়া শেষ করা হলে অনেক চাপ কমে যায় এবং শেষের দিকে আরও আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায়। পড়াশোনা শুধু চাপ হিসেবে নেওয়া উচিত নয়, বরং এটিকে একটি আনন্দদায়ক কাজ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।