নতুন প্রভাতের সঙ্গী দৈনিক আজাদীর শুভ জন্মদিন

ফারহানা ইসলাম রুহী | মঙ্গলবার , ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

দুরন্ত শৈশবের স্মৃতি থেকে বলছি, কলিং বেলের ক্রিং শব্দ। সকাল ৭টায় দরজার নিচে আজাদী দিয়ে যেত হকার। দুই ভাই বোনের চোখের কোণে ঘুম, তবুও বাবা ঘুম থেকে উঠার আগে এক ঝলক দেখতে তো হবেই হবে। কে আগে পড়বে হেড লাইন, তা নিয়ে রীতিমত কাড়াকাড়ি। কতবার যে প্রথম পৃষ্ঠা টানাটানি করতে ছিড়েছে! ইয়াত্তা নেই। তবুও দুই সহোদরের অভ্যাস একটুও বদলায়নি। মাঝে মাঝে বাবার মিষ্টি বকুনি খেলেও, মনে মনে খুশি হতেন ছেলে মেয়েরা পেপার পড়তে ভালোবাসে। সেটা খুব বুঝতাম।
বাবার মুখেই প্রথম শুনেছি, কিশোর বেলায় ভাষা আন্দোলন কালে কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসের অবদানের কথা। ভাষা আন্দোলনের সময় লিফলেট ছাপাবার অপরাধে পুলিশ কোহিনূর ইলেক্ট্রিক প্রেসে হানা দেয়।
‘বিরসরচনা’ মরহুম মোহাম্মদ হোসেন খানের লেখা, অদ্রিস, ‘সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম ও দৈনন্দিন টুকিটাকি’ বয়স তখন বেশী নয় ১২/১৩। কলামগুলো খুব টানতো আমাকে। পেপার পড়ে দেশের নানা জায়গা ঘুরে দেখার আগ্রহের সুবাদে দেশের বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থানে বেড়াতে নিয়ে গেছেন বাবা। পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, ষাট গম্বুজ মসজিদ, রানী ভবানী বাড়ি নাটোর, উত্তরা গণভবন, শিলাইদহ কুঠিবাড়ি। নিজেও লিখতে ভালোবাসতেন। তাই মন থেকে খুব চাইতেন, আমি যেন লিখি। অন্তত বেড়িয়ে আসা স্থানগুলো নিয়ে। আমজনতার প্রিয় দৈনিকে আজমিশালী দিয়ে শুরু হয়েছিল আজাদীর নতুন লিখিয়েদের শুভযাত্রা। খুব সম্ভবত ১৯৯৮/৯৯ সন। একদিন ভ্রমণ কাহিনী বিষয়ক লেখা নিয়ে শ্রদ্ধাভাজন প্রয়াত অরুণ দাদার কাছে নিয়ে এলেন। সেই দিনই প্রথম স্বাধীনতার স্বপক্ষে আজাদীর গৌরবগাথা গৃহে প্রবেশ করি। তখন আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ২য় বর্ষের ছাত্রী। বরেণ্য কবি সাহিত্যিকের লেখা প্রাণের কাছে এনে দিয়েছিল এই বহুল প্রচারিত সমাদৃত কালজয়ী পত্রিকা। নারী পাতা প্রকাশে নারীর অধিকার, আত্ম উন্নয়ন, অগ্রযাত্রায় অবদানের কথা অনস্বীকার্য। অনেক নারী কবি সাহিত্যিক যারা আমার সবহঃড়ৎ হয়ে ছিলেন। তাঁদেরকে আরো বেশি ভালোবেসেছি, প্রিয় দৈনিকে প্রকাশিত লেখা পড়ে। দেশ বিদেশের খবর, সাহিত্য আলোচনা, সামাজিক সংবাদ পরিবেশন করে সমাজকে সমৃদ্ধ করা ছাড়াও, তখন তো ফেইসবুক পেজ ছিল না। যে বিষয়টি উল্লেখ করতে বাধ্য হচ্ছি, বাবাকে দেখেছি আজাদীতে কারো মৃত্যুর সংবাদ ছাপা হলে ছুটে জানাজায় শরীক হতে। শহরে কিংবা গ্রামে। পটিয়া হোক আর রাউজান, যেখানেই হোক। সুসংবাদের সাথে এই দুঃখের সংবাদ নাড়া দিয়েছে বাবার মত শত শত সাধারণ মানুষকে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ, সামাজিক সচেতনামূলক, জ্ঞান বিজ্ঞান, ইতিহাস ঐতিহ্যের পরিচয় ঘটিয়ে আজও ভাল ভাল কাজ উপহার দিয়ে যাচ্ছে, ৬২ বছরের পৌঢ়ত্বে উন্নীত আজাদী। আজাদী পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা, আজাদীর ভালোবাসায় সিক্ত সকল কবি সাহিত্যিক, পাঠক গুণগ্রাহী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইল। আজাদীর শতবর্ষ দেখার সৌভাগ্য হবে কিনা জানি না। শত সহস্র বছর বেঁচে থাকুক জনগণের হৃদয়ের স্পন্দন ও ভালোলাগা হয়ে এই বাসনা পূর্ণতার আশা রাখি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশুভ জন্মবার্ষিকী প্রিয় আজাদী
পরবর্তী নিবন্ধদক্ষিণ চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ এবং আমার পিতার স্মৃতি