নতুন কালুরঘাট সেতুর কাজ আগামী বছরের শুরুতে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৮ মে, ২০২২ at ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ

নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেছেন, নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণের ব্যাপারে অর্থায়নের একটি বিষয় আছে, আমরা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছি। অর্থায়নের ব্যাপারে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক নীতিগতভাবে সম্মতি দিয়েছে, তারা অর্থায়ন করবে। তবে এখনো আমাদের ফাইনাল যে চুক্তি সেটি হয়নি। ঋণের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত থাকে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে কালুরঘাট সেতুর অর্থায়নের ক্ষেত্রে আমরা নিশ্চয়তা পেয়েছি। কোন কোন শর্তে হবে সেটা এখনো ঠিক হয়নি। সহসা কালুরঘাট সেতুর কাজ শুরু হবে। অর্থায়নের বিষয়ে এ বছরের মধ্যে চুক্তি হয়ে যাবে। আর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে আগামী বছরের শুরুতে।
সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বিকালে প্রস্তাবিত কালুরঘাট সেতু এলাকা পরিদর্শন এবং বিদ্যমান পুরনো কালুরঘাট সেতু পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ সব কথা বলেন।
নতুন কালুরঘাট সেতু হতে আরো অনেক সময় লাগবে-এর মধ্যে যদি পুরনো সেতু মেরামত করা না হয় তাহলে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলবে কিভাবে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর জানান, আমাদের টার্গেট আছে আগামী বছরের জুনে কক্সবাজার রেল লাইনের কাজ শেষ করা। তাই এখন আমরা জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যমান (পুরনো সেতুটি) সেতুটি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছি। এই ব্যাপারে বুয়েটের সাথে আমাদের কথাবার্তা ফাইনাল হয়েছে। কিভাবে আমরা আপাতত সেতুটি মেরামত করে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালাতে পারবো-সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে। কাজ যাতে দ্রুত হয়-বুয়েটকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি বলেই আমি আজকে সেতুটি দেখতে এসেছি। তাড়াতাড়ি যাতে বুয়েটকে দিয়ে কাজ করা যায়-আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। তারা পরামর্শ ফি বাবদ আমাদের কাছে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে। আমরা সেটি বিবেচনা করছি। বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী পুরনো এই সেতুটি মেরামত করে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইনের কাজের সাথে সাথে কালুরঘাট পুরনো সেতুর মেরামতের কাজ শুরু না হলে তো ট্রেন চালানো যাবে না। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। এজন্য বুয়েটের মাধ্যমে আমরা পুরনো সেতুটি মেরামত উপযোগী করে তোলার দিকে এগোচ্ছি।
উল্লেখ্য, পুরনো কালুরঘাট সেতুর উপর দিয়ে কক্সবাজার রুটের ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে তুলতে বুয়েটের প্রস্তাবনা নিয়ে গত ১১ মে রেল ভবনে বুয়েটের সাথে রেল কর্তৃপক্ষের সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পুরনো এই জরাজীর্ণ সেতুর উপর দিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত ৯০ থেকে ৯২ টন ওজনের ইঞ্জিনসহ আধুনিক কোচ নিয়ে কক্সবাজারগামী ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে তোলার জন্য বুয়েটকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পেতে চায় রেল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে আধুনিক ইঞ্জিন ও কোচ নিয়ে কক্সবাজারগামী ট্রেন চলাচল উপযোগী করে তোলার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বুয়েট রেলওয়ের কাছে ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা প্রস্তাব দিয়েছে। বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী সেতুটি মেরামত করা হলে আধুনিক ইঞ্জিন ও কোচ নিয়ে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালানো যাবে বলে জানান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বর্তমানে লক্করঝক্কর পুরনো কালুরঘাট সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালছে কোনোমতে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের দিকে কক্সবাজার রুটে পর্যটকবাহী এবং যাত্রীবাহী ও লোকাল ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এজন্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইনের কাজ চলছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন কালুরঘাট সেতুর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ।
বর্তমান কালুরঘাট সেতু দিয়ে কক্সবাজার রুটে দ্রুতগতির ট্রেন চালানো একেবারেই অসম্ভব বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল। একই কথা স্বীকার করেছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। তাই বাধ্য হয়ে রেল কর্তৃপক্ষ শতবছরের লক্করঝক্কর পুরনো কালুরঘট সেতু বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের দেয়া প্রস্তাবনা অনুযায়ী মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে।
গতকাল বিকালে কালুরঘাট সেতু পরির্দশনের সময় সচিবের সাথে উপস্থিত ছিলেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, এডিশনাল জিএম এস এম মুরাদ হোসেন, পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন, আরএনবির চিফ কমান্ডেন্ট জহিরুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত ডিআরএম আরমান হোসেন, বিভাগীয় ভূ-সম্পক্তি কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম, ডেপুটি কমান্ডেন্ট সত্যজিৎ দাশ।
এর আগে সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর সকালে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন পরির্দশন করেন। এ সসময় তিনি ভিআইপি বিশ্রামাগারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি রেল কর্মকর্তাদের সততা ও আন্তরিকতার সাথে রেল যাত্রীদের সেবা প্রদানের পাশাপাশি রেলের সকল প্রকল্পে সততা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেন। তিনি রেল স্টেশনের সামনে পার্কিং স্পেসটি কম টাকায় কেন বরাদ্দ দেয়া হলো তা জানতে চান। বরাদ্দ গ্রহীতা হাই কোর্টে মামলা্‌ করায় এই পার্কিংয়ের গাড়ি ভাড়া এখন থেকে বরাদ্দ গ্রহীতা যেন না নেন সেই ব্যাপারে নির্দেশনা দেন। এ সময় তিনি রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরীকে টিকিট কালোবাজারি যেন না হয় সেজন্য বুকিং ক্লার্কদের নিয়মিত নজরে রাখার পরামর্শ দেন এবং স্টেশন যেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে-যাত্রীরা যেন কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংসদীয় কমিটির সভায় যাচ্ছে বিকল্প প্রস্তাব
পরবর্তী নিবন্ধছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের সংগঠন : অলি